Magic Lanthon

               

মো. জাহাঙ্গীর

প্রকাশিত ২২ এপ্রিল ২০২৪ ১২:০০ মিনিট

অন্যকে জানাতে পারেন:

‘গরিব-দুখিরা এখনকার এই বই দেখে না, এই বই তারা আগে দেখেছে’

মো. জাহাঙ্গীর


প্রেক্ষাগৃহে টানা প্রায় সাড়ে চার দশক ধরে কাজ করছেন মো. জাহাঙ্গীর। রাজশাহী নগরীতে প্রতিষ্ঠিত প্রথম প্রেক্ষাগৃহ অলকায় (পরবর্তী সময়ে স্মৃতি সিনেমাহল) ১২ বছর বয়সে চলচ্চিত্রের প্রচারের কাজ দিয়ে তার কর্মজীবনের শুরু। এরপর প্রেক্ষাগৃহে কাজ করেছেন পিয়ন, পয়েন্ট্রি (লাইনম্যান), টিকিট কালোবাজারি ও নৈশপ্রহরী হিসেবে। বাবা কাঠমিস্ত্রির কাজ করতেন, কিন্তু জাহাঙ্গীরের সেটা ভালো লাগতো না। তাই সময় পেলেই চলে যেতেন প্রেক্ষাগৃহে। এভাবেই একদিন প্রেক্ষাগৃহে তার চাকরি হয়ে যায়। জাহাঙ্গীর প্রথম দিকে প্রেক্ষাগৃহের ম্যানেজারের এটা-ওটা আনা-নেওয়া করতেন; কোনো দিন কারো অনুপস্থিতিতে ড্রেস সার্কেলে কাজ করতেন পয়েন্ট্রির। এর সঙ্গে নিয়মিত যেটা করতেন তা হলো, চলচ্চিত্র দেখা। অলকার বাইরেও তখন রাজশাহীতে থাকা আরো দুটি প্রেক্ষাগৃহে (বর্ণালী ও উৎসব) তিনি চলচ্চিত্র দেখতেন নিয়মিতই।

পরে অলকার মালিকানা পরিবর্তন হলে জাহাঙ্গীরসহ সেখানকার সব পুরনো কর্মচারীর চাকরি চলে যায়। কিন্তু প্রেক্ষাগৃহের মায়া ছাড়তে পারেন না জাহাঙ্গীর। এবার টিকিট কালোবাজারি শুরু করেন সদ্য চালু হওয়া উপহার সিনেমাহলে (উপহার সিনেমা লি. ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দের ১৪ এপ্রিল যাত্রা শুরু করে)। প্রায় দেড় দশক সেখানে তিনি টিকিট কালোবাজারি করেছেন। এরপর ৯০ দশকের শেষের দিকে সেখানেই নৈশপ্রহরীর চাকরি পান জাহাঙ্গীর। এখন রাতে প্রহরীর কাজ আর বাকি সময় কালোবাজারে টিকিট বিক্রি করেন তিনি। দীর্ঘ সময় প্রেক্ষাগৃহের সঙ্গে জড়িত চলচ্চিত্রের পেশাজীবী ব্রাত্য এই মানুষটির সঙ্গে ১৩ মে ২০১৫ ম্যাজিক লণ্ঠন-এর পক্ষ থেকে কথা বলেছেন কাজী মামুন হায়দার

 

ম্যাজিক লণ্ঠন : বোঝে না সে বোঝে না কেমন চলছে? (এই সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় উপহার সিনেমায় মনতাজুর রহমান আকবর পরিচালিত এই চলচ্চিত্রটি চলছিলো)

মো. জাহাঙ্গীর : এই বই (চলচ্চিত্র) চলছে না, লোক ভালো নাই।

ম্যাজিক লণ্ঠন : চলছে না কেনো?

জাহাঙ্গীর : ডিরেক্টর ভালোই, কিন্তু ছবিটা ভালো মতো করতে পারেনি। এই হলো ব্যাপার।

ম্যাজিক লণ্ঠন : কী ধরনের, মানে কী করতে পারেনি?

জাহাঙ্গীর : ছবিটার সৌন্দর্য করতে পারেনি। মানুষ যে ছবিটা দেখবে, তার তো একটা ইন্টারেস্ট লাগবে, দর্শক হবে। এর আগে যে রকম একটা ছবি হয়ে গেলো, আপনার ...।

ম্যাজিক লণ্ঠন : ওয়ার্নিং?

জাহাঙ্গীর : হ্যাঁ, ওয়ার্নিং হয়ে গেলো। ছবিটাতে দেখার মতো অনেক কিছু আছে। দর্শকও ভালো হয়েছে, ছবিও দেখেছে। এ রকম ছবি হলে বাংলাদেশের দর্শক ছবিটা দেখবে। মহিলা, ভদ্রমহিলাদেরকে নিয়ে দেখার মতো ছবি এইগুলা। তাছাড়া যে রকম ছবি চলছে, এই ছবি দেখার মতো কিছু নাই। লোকজন সিনেমা শেষ না করেই মহিলাদেরকে নিয়ে বাড়ি চলে যাচ্ছে। এই বই ভালো না, গানও ভালো না। দেখার কিছু নাই। বই ভালো হলে দর্শক এমনই দেখবে; সিনেমাহলে ভিড় হবে। বই ভালো না হলে সিনেমাহলের ব্যবসাও চলবে না; সিনেমাহলও বন্ধ হয়ে যাবে। অনেক মালিক তো এখন সিনেমাহল বেচে দিচ্ছে, ভেঙে ফেলছে।

ম্যাজিক লণ্ঠন : এই যে কিছুদিন আগে ভারতের সিনেমাগুলো চললো ... ।

জাহাঙ্গীর : ভারতের সিনেমাগুলো চলবে। তবে ভারতে মুক্তি পাওয়ার সাত দিন, ১৪ দিনের মধ্যেই এখানে চালাতে হবে। কিন্তু যেগুলো টিভিতে হয়ে গেছে ৫০-৬০ বার, একশো বার¾সেসব ছবি চলবে না।

ম্যাজিক লণ্ঠন : আচ্ছা, আপনি তো অনেকদিন এটার সঙ্গে জড়িত আছেন। এই যে ভারতীয় সিনেমা যদি বাংলাদেশে আসে, তবে বাংলাদেশের সিনেমার কোনো ক্ষতি হবে না?

জাহাঙ্গীর : বাংলাদেশের সিনেমার কী ক্ষতি হবে!

ম্যাজিক লণ্ঠন : আপনি বললেন, ওখানে মুক্তি পাওয়ার সাত দিন পরে এখানে আসলে ...।

জাহাঙ্গীর : ওখানে মুক্তি পাওয়ার সাত দিন বা ১৪ দিন পরে এখানে আসলে কিছু সেল (বিক্রি) পাওয়া যাবে। লোকে দেখবে, আগ্রহ থাকবে।

ম্যাজিক লণ্ঠন : বাংলাদেশের সিনেমার কোনো ক্ষতি হবে না?

জাহাঙ্গীর : বাংলাদেশের ছবির ক্ষতি হবে কী করে! বাংলাদেশের ডিরেক্টরদেরও ওদের মতো ছবি করতে হবে। যদি এরাও ওদের মতোই ছবি করে, তাইলে বাংলাদেশের ছবি ‘মার খাবে’ কী করে? ধরেন, পাকিস্তান পিরিয়ডে বাংলাদেশের ছবিও চলেছে, পাকিস্তানের ছবিও চলেছে। তখন বাংলাদেশের ছবি চলেনি? মানুষ সিনেমাহলে গিয়ে বাংলাদেশের ছবির টিকিট পায়নি। মারামারি লেগে গেছে, তখন তো বেশি সিনেমাহল ছিলো না। তার মানে পাকিস্তান পিরিয়ডেও বাংলাদেশের ছবি চলেছে। তখন কী করে বাংলাদেশের ডিরেক্টররা ছবি করেছে? ময়নামতি, অবুঝ মন, বেহুলা সুন্দরী¾এইগুলো কী রকম চলেছে! বাম্পার। দুই ভাই, সাত ভাই চম্পা, রাখাল বন্ধু¾এসব বই তখন চলেনি? তখন ছেলে-মেয়েরা সিনেমাহলে জায়গা পায়নি ছবি দেখার মতো। এটা ঠিক তখন অবশ্য বিনোদনের আর কিছু ছিলো না। টিভি ছিলো না, ডিশ ছিলো না। এই জন্য দর্শক তখন খালি সিনেমার ওপর দিয়ে একটু আনন্দ করেছে।