রোকন রাকিব
প্রকাশিত ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১২:০০ মিনিট
অন্যকে জানাতে পারেন:
চলচ্চিত্র সম্পাদনার প্রাযুক্তিক উল্লম্ফন
বিভ্রমের বিশালতায় ‘সত্য’ খুঁজে পাওয়া দায়
রোকন রাকিব
রাঁধুনি বসিয়া পাকে পাক দেয় হাঁড়িতে
গৃহকর্তা হিসেবে অতিথি আপ্যায়নের অভিজ্ঞতা সবারই থাকবার কথা। কারা কারা বা কতো জনকে নিমন্ত্রণ করবেন তা নির্ধারণ করলেন; খাবারের তালিকা তৈরি করলেন; সেই অনুযায়ী বাজারও করা হলো। এবার রাঁধুনি রান্না করলেন। খাবারের সুস্বাদে অতিথিরা রীতিমতো আপনার প্রশংসায় পঞ্চমুখ! গৃহকর্তার আনন্দ দেখে রাঁধুনির কী এক আকাশছোঁয়া সুখ! চলচ্চিত্রের পরিচালক আর সম্পাদকের সম্পর্কটাও ঠিক গৃহকর্তা ও রাঁধুনির মতোই। অন্তত ঋত্বিক ঘটক বিষয়টিকে এভাবেই দেখতেন।১
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ধরন বদলেছে সম্পাদনা প্রযুক্তির। বদলেছে মানুষের রুচি, নান্দনিকতা ও শিল্পবোধ। তবে বদলায়নি সম্পাদকের সঙ্গে নির্মাতার সম্পর্ক। তাই নির্মাতা আর সম্পাদকের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য না হলে, আর যাই হোক ভালো চলচ্চিত্র হয়ে ওঠে না, উঠবার কথাও নয়। রাঁধুনির মতো প্রশংসা নাই জুটুক, অন্তত সার্থক সম্পাদক হতে অনুরণনে ‘ঐকতান’ থাকা চাই-ই চাই। কী, বিষয়টি একটু জটিল হয়ে গেলো! ধরুন, অনেক বাদ্যযন্ত্রের সমন্বয়ে সুর তৈরি করা হলো। কান পাতছেন, তো একটি সুরই ভেসে আসবে। এখন আপনি চাইলেও যন্ত্রগুলোকে আর আলাদা করতে পারবেন না। দর্শকের মনোনিবেশে প্রবেশের জন্য তাই চাই ঐকতান। নানান চরিত্র, ঘটনা বা পরিবেশ ভেদে গতি, আবহসঙ্গীত, কালার গ্রেডিং, শব্দের ব্যবহারে চলচ্চিত্রে কাহিনির মেলবন্ধন বা ঐকতান দরকার। আর হ্যাঁ, ঐকতান তৈরি বা পরিবেশনের ব্যঞ্জনার জন্য চিত্রনাট্যকে বাদ দিলে চলবে না। সবচেয়ে ভালো হয়, কাজের শুরুতেই বিষয়টি মাথায় নেওয়া।
সম্পাদনার আগের কাজ, মানে ইমেজ ধারণের ব্যাপারটা চলচ্চিত্রের শুরুর দিকে মোটেও এখনকার ডিজিটালের মতো সুখকর ছিলো না। তখন সেলুলয়েডের মধ্য দিয়ে আলো প্রবেশ করিয়ে একেকটা ইমেজ তৈরি করা হতো। পরে সেলুলয়েডের ওই ফ্রেমই সম্পাদনা করতে হতো। এডিসনের হাত দিয়ে শুরু হওয়া ৩৫ মি. মি. চলচ্চিত্রকে দীর্ঘকাল ধরে আদর্শ মাপ হিসেবে বিবেচনা করা হতো। তবে ফ্রেম ৮, ১৬ বা ৭০ মি. মি. যে মাপেরই হোক না কেনো, শুরুর দিকে সম্পাদনা যন্ত্র মুভিঅলা’র আশ্রয় নিতে হতো নির্মাতাকে। মোটর চালিত এই যন্ত্রে সেলুলয়েড সম্পাদনা করা হতো। যেকোনো শট্ নিখুঁতভাবে কাটার জন্য ব্যবহার করা হতো এই উল্লম্ব যন্ত্রকে। অবশ্য সম্পাদনার জন্য মুভিঅলা’র চেয়ে জুতসই আর কোনো যন্ত্র চলচ্চিত্রের প্রথম দিকে ছিলো না। মুভিঅলা’র কয়েক বছর পর আসে সম্পাদনার আরেক যন্ত্র স্টিনবেক।