Magic Lanthon

               

ইব্রাহীম খলিল

প্রকাশিত ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১২:০০ মিনিট

অন্যকে জানাতে পারেন:

সালাম সিনেমা এবং একজন মহসিন

ইব্রাহীম খলিল


‘সালাম সালাম হাজার সালাম

চলচ্চিত্র উদ্ভাবনের প্রায় একশো ৩০ বছরে দাঁড়িয়ে নানা কারণে প্রেক্ষাগৃহ থাকবে কি থাকবে না, এ নিয়ে সারাবিশ্বেই প্রশ্ন উঠছে। যদিও চলচ্চিত্রের টিকে থাকা, আধিপত্য ও এর জনপ্রিয়তা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। বরং চলচ্চিত্রে প্রতিনিয়ত নানা প্রযুক্তি যুক্ত হয়ে এটা যেনো মানুষকে আরো বিমোহিত করছে। এমনকি নিয়ন্ত্রণও করছে অনেক ক্ষেত্রে। নানা ঘটনার পাশাপাশি মানুষের চিন্তার জগতে কী খেলে বেড়ায়, আগামী বিশ্বে কী ঘটতে পারে; সবকিছুই গল্প হয়ে ধরা দেয় চলচ্চিত্রে। ফলে চলচ্চিত্রের নির্মাণকৌশল এবং গল্পে যারা এগিয়ে আছে, তারাই এ শিল্পে টিকে থাকছে। তবে চলচ্চিত্রের সবকিছুর মূলে রয়েছে এর দর্শক; যার বেশিরভাগই নিতান্ত সাধারণ মানুষ। তাদের কাছে চলচ্চিত্র আসলে কী? কেনো এ মাধ্যমটি তাদেরকে এতো আকর্ষণ করে? সাধারণ মানুষ চলচ্চিত্র বলতেইবা কী বোঝে? এসব প্রশ্নের উত্তর এক কথায় দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ চলচ্চিত্র কারো কাছে চিত্তবিনোদনের অন্যতম মাধ্যম, আবার কারো কাছে জীবনের অনেক কিছু।

চলচ্চিত্র নিয়ে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি, আবেগ, ভালোবাসাসহ নানা প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে ইরানি চলচ্চিত্রনির্মাতা মহসিন মাখমালবাফ নির্মাণ করেন সালাম সিনেমা (১৯৯৫)। জীবনের সবকিছুই যে পরিকল্পনা মাফিক সাজানো-গোছানো হয় না, এ চলচ্চিত্র তারই উদাহরণ। কারণ মহসিন চলচ্চিত্রের শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে চেয়েছিলেন একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে; কয়েকজন অভিনয়শিল্পী নির্বাচনের জন্য তিনি সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপনও দিলেন; কিন্তু অভিনয়শিল্পী নির্বাচন ও স্ক্রিনটেস্টের দিন নির্ধারিত স্থানে হাজির হয় হাজার হাজার চলচ্চিত্রপ্রেমী মানুষ। এমনকি জায়গার সংকুলান দেওয়াই কষ্টকর হয়ে ওঠে। শিশু থেকে শুরু করে নানা পেশাজীবী মানুষ, তরুণ-তরুণী, বৃদ্ধ সবাই হাজির চলচ্চিত্রে অভিনয়ের আশায়। অনেকে তো কোলে বাচ্চা নিয়ে, স্কুল থেকে পালিয়ে বাড়িতে না বলেই চলে আসে। এমতাবস্থায়, মহসিন ঠিক করলেন অভিনয়শিল্পী নির্বাচন প্রক্রিয়া ও স্ক্রিনটেস্টের দৃশ্য দিয়েই তিনি চলচ্চিত্র নির্মাণ করবেন। সেই চিন্তারই ফসল সালাম সিনেমা।

প্রসঙ্গ সালাম সিনেমা

আমি আপনাদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। দয়া করে লক্ষ করুন। আপনারা অনুগ্রহ করে সবাই সারিবদ্ধ হয়ে লাইনে দাঁড়ান। নারীরাও বেলকনির পাশে এক জায়গায় দাঁড়ান। (এসময় উপস্থিত জনতা চিৎকার করে ফরম দাবি করেন।) চলতি বছর চলচ্চিত্রের শতবর্ষ পূর্ণ হলো। সেজন্য আমরা একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে চলেছি। এখানে সেই সমস্ত মানুষকে তুলে ধরা হবে, যারা চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে আগ্রহী। আমরা ইতোমধ্যেই শুটিং শুরু করে দিয়েছি। এখানে যারা এসেছেন আপনাদের কেউ কেউ অভিনয় করার জন্য মনোনীত হবেন। কারণ আপনারা সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দেখেই এখানে এসেছেন। কিন্তু আপনাদের সংখ্যা ধারণার চেয়েও অনেক বেশি। সুতরাং আপনারা নির্দেশ মোতাবেক অপেক্ষা করুন। আমার সহকারীদের হাতে থাকা কয়েক হাজার ফরম আপনাদের কাছে সরবরাহ করা হবে। আমরা আপনাদের মধ্য থেকে অন্তত একশো জনকে মনোনীত করবো এবং কয়েকজন মুখ্য ভূমিকায় অভিনয়ের সুযোগ পাবেন। সুতরাং আপনারা সবাই এ চলচ্চিত্রের বিষয়বস্তু ও অভিনয়শিল্পী। ফলে আমি আপনাদের নিজেদের চলচ্চিত্রেই অভিনয়ের জন্য স্বাগত জানাই।

মহসিন মাখমালবাফ হ্যান্ডমাইকে এ ঘোষণা দেওয়ার পর জনসমাগম যেনো আরো উতলা হয়ে ওঠে। তার সহকারীরা মাইকে সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানায়। কিন্তু মানুষ ধাক্কা দিয়ে বাড়ির প্রধান ফটক ঠেলে প্রবেশ করতে থাকে। চাপাচাপিতে অসুস্থ হয়ে পড়ে অনেকে। এসব দেখে হতভম্ব হয়ে যান মহসিন। একপর্যায়ে অনেকে তার হাত থেকে অডিশন দেওয়ার ফরম কেড়ে নিতে থাকে। বার বার সতর্ক করার পরও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। উপায় না দেখে মহসিন হাতে থাকা ফরম আকাশে ছুড়ে মারেন। তখন অবস্থা আরো বেগতিক হয়। ধাক্কাধাক্কি আরো বেড়ে যায়। তবে শেষ পর্যন্ত শান্ত হয় পরিস্থিতি।

থিয়েটারের মতো একটি বড়ো কক্ষে শুরু হয় অডিশন। সামনে একটি চেয়ার-টেবিল নিয়ে বসে আগ্রহীদের মহসিন ডাকতে থাকেন। প্রথমেই এক অন্ধ ব্যক্তিকে হাত ধরে এগিয়ে নিয়ে আসেন মহসিনের এক সহকারী। তাকে চেয়ার-টেবিলের সামনে মেঝেতে অঙ্কিত চতুর্ভুজ আকৃতির একটি বন্ধনীর মধ্যে দাঁড় করাতে বলেন মহসিন। চলচ্চিত্রের প্রতি তার অতি আবেগ-ভালোবাসা দেখে তিনি আসলেই অন্ধ কি না একপর্যায়ে মহসিনের সন্দেহ হয়। পরে তিনি ধরে ফেলেন আসলেই ওই ব্যক্তি অন্ধ নন। এরপর আসে চার কিশোরী। তাদের মধ্যে একজন মা বা কোনো দম্পতির ভূমিকায় অভিনয় করতে চায়। কিশোরী হয়েও কেনো ওই চরিত্রে অভিনয় করতে চাও-এমন প্রশ্নের ব্যাখ্যা দিতে পারে না সে। কিছুক্ষণ পরে কয়েকজন নারী আসে। তাদের মধ্যে একজন কোনো অভিনয় পারেন না এবং তিনি অভিনয়ের জন্য আসেননি বলেও দাবি করেন। আসার কারণ জানতে চাইলে জনসম্মুখে না বলে মহসিনের সঙ্গে একান্তে আলাপ করতে চান তিনি। তার এমন আবদারে অবাক হলেও মহসিন তার সঙ্গে কথা বলার আশ্বাস দেন।

আবার অনেকে নিজেকে মেনরিল মনরো, জেনিফার লোপেজ-এর মতো অভিনয়শিল্পী মনে করেন; একজন মনে করেন তার চেহারা ‘খারাপ, তিনি খলনায়ক চরিত্রে অভিনয় করতে পারবেন। উপস্থিত সবাইকেই একের পর এক প্রশ্ন করেন মহসিন। অধিকাংশকেই তিনি কান্নার দৃশ্যে অভিনয় করে দেখাতে বলেন। অনেকে সফল হয়, আবার কেউ কেউ কান্নার অভিনয় করার কথা বলায় রেগে যায়। তাদের যুক্তি একের পর এক খণ্ডন করেন মহসিন। বের করে নিয়ে আসেন তাদের মনের ভিতরকার মানুষটাকে। এভাবেই সবার সঙ্গে অভিনয়, ব্যক্তিজীবন আর নানা প্রশ্নের মাধ্যমে অডিশন চলতে থাকে। মোটাদাগে এই হলো সালাম সিনেমা।

শতবর্ষেও অমলিন চলচ্চিত্র

অডিশনের জন্য অন্ধ সেজে আসা প্রথম ব্যক্তিকে মহসিন প্রশ্ন করেন, আপনার নাম কী? চশমা পরিহিত সেই ব্যক্তি বলেন, সালাম (আসসালামু আলাইকুম)। আপনিই কি মিস্টার মাখমালবাফ? আমি কি আপনার সামনেই আছি? মহসিন বলেন, হ্যাঁ, আপনি আপনার মাথা উঁচু করেন। আপনার নাম কী? তিনি তার নাম জানান, হাদি মুখতারিয়ান। হাদি জানান, ইরানের কারমা নামের একটি শহর থেকে তিনি অডিশনের দুই দিন আগে এখানে এসেছেন। রাত কাটিয়েছেন স্থানীয় একটি পার্কে। জীবনে কয়েকবার তার এক বন্ধুর সঙ্গে থিয়েটারে অভিনয় করেছেন; প্রেক্ষাগৃহে চলচ্চিত্রও দেখেছেন। তিনি শব্দ শুনেই বুঝতে পারেন পর্দায় কে, কেনো কাঁদছে। যে দৃশ্যে শব্দ থাকে না, সেটা তার বন্ধুই তাকে বিশ্লেষণ করে দিতেন। তবে সেই বিশ্লেষণ সবসময় তিনি ঠিক বুঝে উঠতে পারতেন না। মহসিনের কাছে তিনি এসেছেন তার চলচ্চিত্রে ইতিবাচক কোনো চরিত্রে অভিনয় করতে।

একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী, যিনি কখনো কোনো চলচ্চিত্রই দেখতে পারেননি; পর্দার মহিমা না দেখে চলচ্চিত্রের প্রতি তার এই উৎসাহ দেখে সন্দিহান হয়ে ওঠেন মহসিন। তিনি হাদিকে প্রশ্ন করেন, আপনি চশমা পরে আছেন কেনো, কোনো সমস্যা? জবাবে হাদি বলেন, একটু সমস্যা আছে। চশমাতে কি ভালো লাগছে না? মহসিন বলেন, ঠিক আছে, ভালো লাগছে। কিন্তু আপনি যদি চলচ্চিত্র না দেখে থাকেন, তাহলে চলচ্চিত্রের প্রতি কীভাবে এতো আকৃষ্ট হলেন? শব্দই কি আপনার কাছে বেশি ভালো লাগে? আসলে আপনার কাছে চলচ্চিত্র কী? হাদি বলেন, চলচ্চিত্রের প্রত্যেকটা শটই আমাকে আবেগতাড়িত করে। আমি সবই বুঝতে পারি, মায়ের মৃত্যুতে কেউ কাঁদলেও আমি বুঝতে পারি। কিন্তু হাদির কোনো জবাবেই যেনো আশ্বস্ত হতে পারছিলেন না মহসিন। তিনি হাদিকে বলেন, আপনি চশমা খুলে কান্নার অভিনয় করে দেখান, চলচ্চিত্রের প্রতি আপনার যে আবেগ-ভালোবাসা সেটা আমাকে চোখ খুলে বলুন। হাদি নানা ছলে সেটা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও মহসিন নাছোড়বান্দা। তিনি হাদিকে বলেন, আপনি চোখ খোলা রাখেন, যাতে আমরা বুঝতে পারি আপনি কোনোদিন চলচ্চিত্র দেখেননি। ধরা পড়ার আশঙ্কা দেখা দেওয়ায়, হাদি এবার কান্নাকাটি শুরু করে দেন। তিনি বলতে থাকেন, চলচ্চিত্রকে তিনি ভীষণ ভালোবাসেন; এর জন্য অসৎ কাজ ছাড়া তিনি যেকোনো ধরনের কাজ করতে রাজি আছেন। মহসিন তাকে আশ্বস্ত করে বলেন, যদি আপনি সবকিছু করতে রাজি থাকেন, তাহলে চোখ খুলে দেখান আসলেই আপনি অন্ধ নন। আপনি কি চলচ্চিত্রের জন্য এটা করতে পারবেন? এবার হাদি হ্যাঁ বলে চোখ খোলেন। দেখা যায়, তিনি একেবারেই সুস্থ মানুষ, চোখে কোনো ধরনের সমস্যা নেই!

হাদির এ কাণ্ড দেখে মহসিন অবাক হন। হাদিকে প্রশ্ন করেন, আপনি আমাদের মিথ্যা বললেন কেনো? আপনি কি ভেবেছিলেন এভাবে অন্ধ হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করলে অভিনয়ের সুযোগ পেয়ে যাবেন? হাদি বলেন, আমি এ রকম কখনোই ভাবিনি। আসলে চলচ্চিত্রের প্রতি ভালোবাসা থেকেই আমি এটা করেছি। আমি তো কেবল অভিনয়ই করে যাচ্ছিলাম। এখানে আপনি যা যা বলেছেন, আমি সেটাই করেছি। তাছাড়া আমি এখানে পৌঁছানোর আগে থেকেই অভিনয় করে যাচ্ছি। আমি অনেক দূর থেকে অন্ধ সেজে এখানে এসেছি, কেউ বুঝতে পারেনি। মহসিন প্রশ্ন করেন, তাহলে অন্ধের চরিত্রটাই কেনো বেছে নিলেন? আপনার পরিচিত কেউ কি অন্ধ? হাদি বলেন, না, তবে আমি এই চরিত্রটা বুঝি। আমি একজন অন্ধ ব্যক্তিকে চিনি, তাকে সবসময় সাহায্য করার চেষ্টা করি। হাদির এভাবে অন্ধ সেজে আসা এবং তার সঙ্গে কথোপকথনের দৃশ্যটুকু চলচ্চিত্রে রাখার কথা তাকে জানান মহসিন।

কয়েকজনের পর আসে সেই তরুণী, যিনি কোনো অভিনয় পারেন না, এমনকি অভিনয়ের ইচ্ছেও তার নেই। তাহলে অডিশন দিতে আসার কারণ কী, জানতে চাইলে তিনি জনসম্মুখে না বলে মহসিনকে একাকী বলতে চান। মহসিন সেই সুযোগ দিলে তরুণী জানান, তার প্রেমিকের সঙ্গে কিছুদিন আগে তিনি চুরি করে বিয়ে করেছেন। কিন্তু সেটা তার প্রেমিকের পরিবার মেনে না নিয়ে তাকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়ে দিয়েছে। এখন পরিবারের পুরুষ সদস্যের অনুমতি ছাড়া একাকী নারী হয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে তার স্বামীর কাছে যেতে পারছেন না। এ অবস্থায় তার মনে হয়েছে, বিদেশে যেতে তাকে আব্বাস কিয়ারোস্তামি অথবা মহসিনের চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে হবে। তাদের চলচ্চিত্র ইউরোপের বিভিন্ন উৎসবে দেখালে সেটা সেখানে পুরস্কার পাবে। সেই পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে তিনিও নিশ্চয় আমন্ত্রিত হবেন। তখন তিনি ইউরোপে গিয়ে তার স্বামীর কাছে পালিয়ে যাবেন!

এরপর দুই ছেলেকে নিয়ে আসেন চল্লিশোর্ধ্ব একজন। ওই ব্যক্তি ইরানের ইসলামি বিপ্লবের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন; রাজনৈতিক বন্দি হিসেবে জেলও খেটেছেন। এখন নানাধরনের কাজ করে জীবন নির্বাহ করেন। তার আশা, মহসিন তার দুই ছেলেকে চলচ্চিত্রে অভিনয়ের সুযোগ করে দিয়ে তাদের ভবিষ্যৎ গড়তে সহায়তা করবেন। কিন্তু অডিশনে তার দুই ছেলে কোনো ধরনের অভিনয়ই করতে পারে না। তখন সন্তানদের সুযোগ দেওয়ার জন্য ওই ব্যক্তিকেই অভিনয় করে দেখাতে বলেন মহসিন। অন্যদিকে দুই নারী শিক্ষার্থী সংবাদপত্রে অভিনয়ের বিজ্ঞাপন দেখে স্কুল পালিয়ে অডিশন দিতে এসেছে। তারা জানায়, ছোটো থেকেই তারা চলচ্চিত্রে অভিনয়ের স্বপ্ন দেখে এবং বাড়িতে একা একা চর্চাও করে অভিনয়ের। তাদের কথায় মনে হয়, অভিনয়ের সুযোগ না পেলে তাদের হৃদয় ভেঙে যাবে। তারা আবেগে কান্নাকাটিও শুরু করে দেয়। মহসিন তাদেরকে নানাভাবে প্রশ্ন করে তাদের চলচ্চিত্রের প্রতি আবেগকে পরখ করে দেখেন।

চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য অডিশন দিতে আসা এসব মানুষের যে ভালোবাসা-আবেগ স্পষ্ট ধারণা দেয়, চলচ্চিত্র টিকে থাকবে কি না। নানা দেশে চলচ্চিত্রশিল্প বিভিন্ন সঙ্কটের মধ্য দিয়ে গেলেও এর যে বিমোহিত করার ক্ষমতা সেটা আজও বিদ্যমান। এখানে নির্মাতা মহসিন মাখমালবাফ বিভিন্ন বয়সের চলচ্চিত্রপ্রেমীদের দেখিয়েছেন, যারা ভিন্ন পেশা, স্তরের মানুষ হলেও তাদের সবারই একটি জায়গায় মিল রয়েছে; সেটা হলো চলচ্চিত্রের প্রতি ভালোবাসা। আর সে কারণেই অডিশনের সময় অধিকাংশেরই নাম জানার প্রয়োজন মনে করেন না মহসিন। কারণ এসব মানুষের নাম, বয়স, শ্রেণি ভিন্ন হলেও তাদের সবার পরিচয় তারা চলচ্চিত্রপ্রেমী।

ফলে হাদি মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে যেভাবে অন্ধ সেজে দুই দিন ধরে পার্কে রাত যাপন করেন, অসহায় বাবা ছেলেদের ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য মহসিনের কাছে ছুটে আসেন, নাম না জানা নারী তার স্বামীর কাছে ছুটে যেতে নিরুপায় হয়ে অভিনয়ে আসতে চান এবং অভিনয়শিল্পী হওয়ার জন্য স্কুল পালিয়ে আসা দুই শিক্ষার্থীর যে নিবেদন, তা আবিষ্কারের শর্তবর্ষ পরেও চলচ্চিত্র নিয়ে আশাবাদী করে তোলে। একই সঙ্গে চলচ্চিত্রের আবেদন সম্পর্কেও স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়। ফলে চলচ্চিত্র নিয়ে আশাহত নয়, বরং স্বপ্ন দেখারই ইঙ্গিত দেন মহসিন।

পুরুষ প্রাধান্যশীল সমাজে ইরানি নারী

১৭ বছর বয়সে দেশের অবস্থা দেখে রাজনীতি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মসহিন মাখমালবাফ। বিপ্লবী চে গুয়েভারায় প্রভাবিত হয়ে বন্ধুদের নিয়ে চেয়েছিলেন বিপ্লবের মাধ্যমে সমাজকে বদলে দিতে। সেই ঘোর থেকেই একদিন পুলিশকে আক্রমণ করে বসেন মহসিন। ছুরি মেরে পুলিশের অস্ত্রও তিনি ছিনিয়ে নেন। শেষমেষ পুলিশের হাতে ধরা পড়ে পাঁচ বছর জেল খাটেন। জেলে বসেই সিদ্ধান্ত নেন, চের মতো সমাজ বদলে ইরানে সহিংসতার পথ বেছে নেওয়া সম্ভব নয়। ফলে মহাত্মা গান্ধীকে মহানায়ক ভেবে অসহিংস পথ হিসেবে চলচ্চিত্র ও লেখার মাধ্যমে নানা অসঙ্গতি তুলে ধরায় তিনি ব্রতী হন। কিন্তু সেখানেও শাসক শ্রেণির বাধা আসে। সেন্সরবোর্ড, নানা আইন আর নিষেধাজ্ঞার বেড়াজালে সরু হয়ে আসে তার অহিংস আন্দোলনের এ পথও। তবুও থেমে থাকেন না মহসিন। সুযোগ পেলেই সমাজের অসঙ্গতি তুলে ধরার সুযোগ তিনি হাতছাড়া করেন না।

ইরানে কথিত ইসলামি বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতার পালাবদল হলেও অনেক কিছুর পাশাপাশি নারীর অবস্থান যে ভালো জায়গায় নেই, সে চিত্র কিছুটা হলেও উঠে এসেছে সালাম সিনেমায়। আইনের কারণে দেশটিতে কোনো নারী একাকী কোথাও ভ্রমণ করতে পারে না, এমনকি বাস বা ট্রেনের টিকেটও কাটতে পারে না। ফলে নারীরা যে এক্ষেত্রে কতো অসহায় সে দৃশ্যই ফুটে ওঠে অডিশন দিতে আসা ওই নারীর কথায়। যিনি স্বামীর কাছে যাওয়ার জন্য সব পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায়, উপায় না পেয়ে মহসিনের দারস্থ হয়েছেন। তার বিশ্বাস মহসিন যে চলচ্চিত্রই নির্মাণ করবেন, সেটা ইউরোপের কোনো না কোনো উৎসবে ঠিক পুরস্কার জিতবে। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়েই তিনি ইউরোপে যাবেন। কৌশলী মহসিন অভিনয় না পারলেও তাকে একটা সুযোগ দেন। কারণ রাষ্ট্র কর্তৃক নির্মিত পুরুষ অবিভাবকত্ব আইন যে নারীকে কতোটা অসহায় করে তুলেছে, সেটা মানুষের জানা প্রয়োজন। একই সঙ্গে এ নারী নিজের লক্ষ্যে পৌঁছাতে উপায় হিসেবে চলচ্চিত্রকে বেছে নিয়েছেন, সেটাও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। জার্মানির বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে সালাম সিনেমা পুরস্কার জিতলেও ওই নারী সেখানে যেতে পেরেছিলেন কি না সেটা অবশ্য জানা যায় না।

অন্যদিকে ১৬ বছর বয়সি স্কুল পালানো দুই শিক্ষার্থী যখন বাবা-মাকে না জানিয়ে অভিনয়ের জন্য ছুটে আসে, সেটাও ইরানি নারীর অবস্থানেরই আরেক গল্প বলে। কারণ তারাও আস্তে আস্তে ‘নারীতে পরিণত হচ্ছে এবং তাদের জীবনে ইতোমধ্যেই আসতে শুরু করেছে নানা বাধা-নিষেধ। মেধাবী হওয়া সত্ত্বেও কেবল নারী হওয়ার কারণে লক্ষ্যে পৌঁছাতে তাদের পাড়ি দিতে হবে অনেক কণ্টকাকীর্ণ পথ। যা পুরুষের ক্ষেত্রে মোটেও কঠিন নয়। আগের নারীর ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় বাধা থাকলেও এই দুই শিক্ষার্থীর সামনে সামাজিক বাধা উপস্থিত। ফলে যারা কেবল রাষ্ট্রীয় পরিবর্তনের কথা বলে মুখে ফেনা তুলে বেড়ায়, তাদের কাছে ভিন্ন প্রশ্নের উদয় করেন মহসিন। কারণ মহসিন মনে করেন, ইরানি সমাজের সমস্যাটা কেবল রাজনীতিতে না; আর তা একটা সরকার বা সরকারি নীতি বদলে গেলেই সেরে যাবে না; সমস্যাটা সাংস্কৃতিকও। ইরানি জনগণের কিছু মানসিকতা, কিছু চিন্তার জায়গা বদলে দিতে পারলেই কেবল এ সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব। ইরানি সমাজ বিশ্বাস করে, জীবনের পথ একটাই-সেখানে এক ভাষা, এক ক্ষমতা, এক সত্য। আর এই বিশ্বাসই তাদের চরম প্রতিক্রিয়াশীল করে তোলে।

ধন্য ধন্য বলি তারে

এক ঘণ্টা ১১ মিনিট ব্যাপ্তির সালাম সিনেমায় ৩৫ মিনিটের বেশি সময় মহসিনের সঙ্গে স্কুলপড়ুয়া দুই নারী শিক্ষার্থীর বাহাস হয়। শুরুতেই তারা মহসিনকে জানায়, চলচ্চিত্রকে তারা ভীষণ ভালোবাসে এবং অভিনয়ের জন্যই অডিশন দিতে এসেছে। তখন মহসিন অন্য সবার মতো তাদেরকেও কান্নার অভিনয় করে দেখাতে বলেন। মহসিনের বক্তব্য, যে ব্যক্তি ভালোবাসা কী সেটা বুঝতে পারে, সেই দ্রুত কাঁদতে পারে। এ সময় দুই মেয়ের একজন জানায়, তার হাত-পা কাঁপছে, শরীর অবশ হয়ে আসছে। এর অর্থ সে কাঁদতে পারবে না। যখন তার ভীষণ কান্না আসে, তখন তার এমন পরিস্থিতিই হয়। কিন্তু অনড় মহসিন তাদের কান্না দেখতে চান। তখন ওই মেয়ে জবাব দেয়, সবাই তো কাঁদতে পারে না। সবার কাঁদার বা দুঃখ প্রকাশের ভঙ্গিও এক না। তাহলে তিনি কেনো তাদেরকে জোর করছেন। তাদের বক্তব্য যথাযথ মনে হলেও মহসিন যখন সাফ জানিয়ে দেন তারা না কাঁদলে চলচ্চিত্রে অভিনয়ে নিবেন না। তখন বাদ পড়ার ভয়ে-কষ্টে তারা নিজের অজান্তেই অঝোরে কাঁদতে থাকে। একই সঙ্গে অব্যাহত থাকে মহসিনের সঙ্গে তাদের বাহাসও। মহসিন তাদের কথা বলার সুযোগ দেন। এ সময় মহসিনকে অনেকটা শিক্ষকের ভূমিকায় দেখা যায়। একসময় মনে হয়, ওই দুই শিক্ষার্থীর প্রতি মহসিন কেমন যেনো অভিভাবকসূলভ আচরণ করছেন।

মহসিনের বড়ো মেয়ে সামিরা মাখমালবাফের সঙ্গে এই দুই শিক্ষার্থীর বেশ মিল রয়েছে। যারা নির্দিষ্ট গণ্ডি পেরিয়ে নিজস্ব জগৎ তৈরি করতে চায়, চলচ্চিত্রে বিভোর হয়ে থাকতে চায়। স্কুলে পড়ার সময় ইরানি শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে সামিরা ব্যাপক হতাশ ছিলেন। ভাষা, ভূগোল, বিজ্ঞান, অঙ্ক সব পাঠ্যপুস্তকেই ধর্ম থাকায় সামিরা নাকি অসুস্থ হয়ে পড়েন, এমনকি কয়েকবার আত্মহত্যাও করতে চেয়েছিলেন। সামিরা পরে বাবাকে চলচ্চিত্র নির্মাণের ইচ্ছা জানালে, নিজের মেয়েসহ অন্যান্যদের জন্য সরকারের কাছে একটি ফিল্ম স্কুল খোলার অনুমতি চান মহসিন। কিন্তু সরকার তার প্রস্তাব নাকচ করে দেয়। পরে তিনি নিজেই তার বাড়িতে ছোটো পরিসরে ফিল্ম স্কুল চালু করে নাম দেন ‘মাখমালবাফ ফিল্ম হাউস। যার বাস্তবিক কোনো কাঠামো বা শারীরিক অস্তিত্ব ছিলো না। এ ফিল্ম স্কুলের বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই ছিলেন মহসিনের পরিবারের মানুষ। মহসিনের স্ত্রী, মেয়ে সামিরা, মাইসাম ও হানা আর তার কয়েক বন্ধু। মহসিনের ভাষায়,

আমাদের স্কুলটা গতানুগতিক স্কুল ছিল না। এখানে রান্না করা, সাঁতার কাটা, ভ্রমণসহ সিনেমা বানানোতে যা যা লাগে সেসব শেখানো হতো। সচেতনভাবে আমি কেবল একটা জিনিস উসকে দিতাম; তা হলো : তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর ক্ষমতা। গতানুগতিক শিক্ষা-ব্যবস্থায় আমরা শিশুদের আত্মবিশ্বাসকে খুন করে ফেলি; কারণ, আগে কেউ একজন পেয়েছে এমন জিনিস আমরা পুনরাবৃত্তি করতে থাকি। যা আগেই পাওয়া হয়ে গেছে তা যদি অনুসরণ করি, তাহলে কেন আমরা পৃথিবীতে আছি? আমি বিশ্বাস করি, আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর কোনো শিক্ষা নেওয়া গেলেই অলৌকিক কিছু পাওয়ার আশা করতে পারে কেউ, তার আগে না।

সালাম সিনেমায়ও মহসিন ওই দুই শিক্ষার্থীকে নিজেদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করেন। তারা যখন কাঁদতে পারবে না বলে নানা অজুহাত দেখায়, তখন ভিন্নভাবে তাদেরকে অঝোরে কাঁদতে বাধ্য করেন মহসিন। একসময় তিনি জিজ্ঞেস করেন, তোমরা কাঁদছো কেনো? তারা জানায়, তারা চলচ্চিত্রকে ভীষণ ভালোবাসে। ছোটোকাল থেকে তারা চলচ্চিত্রে অভিনয়ের স্বপ্ন দেখে আসছে, এখন স্বপ্নের এতো কাছাকাছি এসে তারা স্বপ্নভঙ্গের কষ্ট সহ্য করতে পারছে না। তাছাড়া তিনি তো নিজেও কাঁদতে বলেছেন। তাদের একজন তো মহসিনকে মুখের ওপর বলেই দেয়, ‘আমার স্বপ্ন থেকে কেউ আমাকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারবে না। আমি তিন-চার বছর বয়স থেকে অভিনয়ের স্বপ্ন দেখে আসছি। আমি একজন অভিনয়শিল্পী হতে চাই এবং সেটা যেকোনো উপায়ে হবোই। যদি কেউ আমাকে থামানোর চেষ্টা করে তাহলে আমি নিজেই চলচ্চিত্র নির্মাণ করবো এবং সেখানে অভিনয় করবো!’ মহসিন তার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতে থাকেন। ওই শিক্ষার্থী অনর্গল বলতে থাকে, ‘কথায় আছে ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়। আমি আমার বাবা-মাকে এর জন্য অনেক কষ্টে রাজি করেছি। আমার পরিবার আমাকে অভিনয়শিল্পী বানানোর জন্য আর ধৈর্য ধরতে পারছে না। আমি ভিতরে ভিতরে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাচ্ছি। আমি চলচ্চিত্রকে ভীষণ ভালোবাসি। আমি বিশ্ব চলচ্চিত্রের অংশ হয়ে উঠতে চাই। মহসিন তাদের মধ্যে চলচ্চিত্রের প্রতি ভালোবাসা ও স্বপ্ন ছোঁয়ার অদম্য জেদ খুঁজে পান। ফলে তিনি তাদের আত্মবিশ্বাসকে আরো পরখ করে দেখতে থাকেন।

চলচ্চিত্রের ৪২ মিনিটে মহসিন তাদের কাছে প্রশ্ন রাখেন, তারা মানবিক ব্যক্তি হতে চায়, নাকি একজন সত্যিকারের শিল্পী হতে চায়? তারা জবাব দেয়, অন্য সবার মতো তারাও মানবিক গুণ-সম্পন্ন মানুষ হতে চায়। তখন মহসিন প্রস্তাব দেন, যদি চলচ্চিত্রে তাদের থাকা না থাকার প্রশ্ন ওঠে, তাহলে তারা শিল্পী নাকি মানবিক হওয়াকে বেছে নিবে? তারা জবাব দেয়, মানবিক হওয়ার জন্য তারা প্রয়োজনে স্থান ত্যাগ করবে। তবে তারা মানবিকতার পাশাপাশি শিল্পকেও পছন্দ করে। তাদের পর্যবেক্ষণ, একজন শিল্পী অন্য মানুষের চেয়ে একটি ছোট্ট মশাকেও অনেক শ্রদ্ধা করে। অনেকটা ইঞ্জিনিয়ারদের মতো, যারা অনুভূতির চেয়ে নিজেদের ফরমুলাকেই বেশি প্রাধান্য দেয়। একজন শিল্পীও অনেক দয়ালু। যদি তারা শিল্পকে ত্যাগ করে, তাহলে হয়তো নিজেকেই ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিবে। তারপরও থাকা না থাকার বিষয়ে একটিকে বেছে নিতে হলে মানবিকতাকেই তারা বেছে নেবে। মহসিন যুক্তি দেন, ‘যদি এখানে অবস্থান করো তাহলে তোমরা শিল্পী হতে পারবে। আর যদি তোমরা চলে যাও তাহলে অনেক মানবিক গুণসম্পন্ন মানুষ হতে পারবে। ফলে তোমাদের যদি কেউ শিল্পী হতে চাও তাহলে অবস্থান করতে পারো, আর যদি মানবিক হতে চাও তাহলে চলে যাও। তখন তাদের একজন বলে, সে অনেক মানবিক হতে চায়, তাই চলে যাচ্ছে। তবে সে এটাও বিশ্বাস করে, এ মানবিকতাই তাকে শিল্পকে ত্যাগ করার জন্য নিঃশেষ করে দিবে।

ফলে মহসিনের কথা অনুযায়ী যেহেতু একটিকে বেছে নিতে হবে, তাই ভঙ্গুর হৃদয় নিয়ে বেরিয়ে যায় এ দুই শিক্ষার্থী। দীর্ঘক্ষণ যুক্তি শোনা ও চলচ্চিত্রের প্রতি তাদের আবেগ দেখার পর দর্শক হিসেবে তাদের প্রতি কোথায় যেনো সহানুভূতি তৈরি হয়। প্রশ্ন জাগে, চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে মানবিক হওয়া না হওয়া কিংবা শিল্পী হওয়ার কী সম্পর্ক? একজন মানবিক গুণসম্পন্ন ব্যক্তি কেনো চলচ্চিত্রে অভিনয়ের যোগ্য নয়? যাই হোক, তারা চলে গিয়ে ঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলেই মনে হয়। কারণ একজন শিল্পী হওয়ার জন্য মানবতাকে তো বিসর্জন দেওয়া যায় না! একটু পরই লোক পাঠিয়ে তাদেরকে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন মহসিন। তারা আসার পরই মহসিন প্রশ্ন করেন, তোমরা কী ঠিক করলে? তারা জবাব দেয়, একজন সত্যিকারের শিল্পী এবং একই সঙ্গে মানবিক ব্যক্তি-দুটিই হতে চাই! এ দুটিই একই সঙ্গে হওয়া সম্ভব। একটির সঙ্গে আরেকটির কোনো বিরোধ নেই। তাদের ভাষ্য,

যখন আমরা চলে গেলাম, তখন ভাবলাম, আসলেই তো একই ব্যক্তি একই সঙ্গে শিল্পী এবং মানবিক গুণসম্পন্ন ব্যক্তি হতে পারে। কাউকে শিল্পী হতে হলে অবশ্যই তাকে মানবিক হতে হবে। একজন শিল্পী অন্য মানুষের চেয়ে একটি মশার মধ্যে অনেক বেশি সৌন্দর্য দেখতে পান। যখন চলে গেলাম তখন বুঝতে পারলাম একজন শিল্পী কেনো মানবিক বা দয়ালু হতে পারবে না? বরং যে শিল্পী মানবিক নন, তিনি আসলে শিল্পীই নন।

তখন মহসিন বলেন, তোমরা সত্যিই কি অভিনয় করতে চাও? তারা হ্যাঁ সূচক জবাব দেয়। তবে তাদের একজন মহসিনের কাছে জানতে চায়, মানবিক হওয়ার বিপরীতে যদি তাকে চলচ্চিত্র ছেড়ে দেওয়ার শর্ত দেওয়া হতো, তাহলে তিনি কোনটি গ্রহণ করতেন? মহসিন কোনো জবাব দেন না। মনের মধ্যে কোথায় যেনো আচমকা হাসি খেলে যায়। এবার সত্যিই মহসিন বেকায়দায় পড়েছেন; তার ধাঁধাময় প্রশ্নের উত্তর ওই শিক্ষার্থীরা উদ্ভাবন করে ফেলেছে! পরক্ষণেই মহসিনের উদ্দেশ্য পরিষ্কার হয়ে যায়। তিনি আসলে তাদের মধ্যে একের পর এক প্রশ্নের উদয় করে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তুলেছেন। একই সঙ্গে সেসব প্রশ্নের উত্তর নিজে না দিয়ে তাদের ওপরই ছেড়ে দিয়েছেন। ফলে ব্যক্তিজীবনে নিজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যেমন কৌশলে শিক্ষা দেন পর্দায়ও তিনি সেটা অব্যাহত রেখেছেন।

সে কথা কইবো কেমনে

সালাম সিনেমায় একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র ফয়জুল্লাহ, ইরানের ইসলামি বিপ্লবের সঙ্গে তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন। দুই ছেলেকে নিয়ে তাদের চলচ্চিত্রে অভিনয় করানোর জন্য মহসিনের কাছে আসেন তিনি। বিপ্লবী ফয়জুল্লাহর বর্তমান পরিস্থিতি ভীষণ করুণ। নানাধরনের কাজ করে তিনি জীবন নির্বাহ করেন। যে আশা নিয়ে তিনি বিপ্লব করেছিলেন, সেটা পূরণে ইরানের ইসলামি সরকার ব্যর্থ হয়েছে। ইরানে নিত্য নতুন আইন তৈরি আর পশ্চিমা দেশগুলোর অবরোধ, হুমকি মোকাবিলাতেই সরকারের যতোসব প্রস্তুতি। সাধারণ মানুষের কথা চিন্তার সময়ই নেই তাদের। ফলে ফয়জুল্লাহ আকার-ইঙ্গিতে বোঝান, রাষ্ট্রের কাছে কোনো কিছু প্রত্যাশা তিনি করেন না। তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই মহসিনের কাছে সন্তানদের নিয়ে হাজির হয়েছেন।

রাজনৈতিক, একই সঙ্গে মানবিক এ বিষয়টিও কৌশলে তুলে ধরেছেন মহসিন। কারণ মহসিন নিজেও স্বপ্নভঙ্গের শিকার। বিপ্লবের পর যে সরকারব্যবস্থা চালু হয়েছে, তার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত হেনস্তার শিকার হয়েছেন তিনি। রাষ্ট্রীয় বাধা-নিষেধের কারণে চলচ্চিত্র বা লেখার মাধ্যমে খুব বেশি কিছু তুলে ধরার সুযোগ মহসিন পাননি। ফলে তিনি ফয়জুল্লাহকে প্রশ্ন করেন, ‘আপনি বিপ্লব করেছিলেন, জেল খেটেছেন; আমার অতীতও একই রকম। আপনি কি সেগুলো জেনেই আমার কাছে এসেছেন? আমি কি আপনাকে সেই সব কারণেই সুযোগ দেবো?’ ফয়জুল্লাহ না সূচক জবাব দিয়ে জানান, যদি তার সন্তানরা অভিনয় করে দেখাতে পারে, তাহলে তিনি বিশ্বাস করেন মহসিন তাদেরকে একটা সুযোগ দেবেন। তিনি অতীতের কাজের জন্য মহসিনের কাছে কোনো সুবিধা নিতে চান না। কিন্তু ফয়জুল্লাহর দুই ছেলে কোনো অভিনয় বা একটু কেঁদেও দেখাতে পারে না। অবশ্য এজন্য মহসিন তাদের বের করে দেন না। সন্তানদের জন্য ফয়জুল্লাহরই পরীক্ষা নেন মহসিন!

সন্তানরা অভিনয়ে ব্যর্থ হওয়ায় যখন একের পর এক ফয়জুল্লাহকে অভিনয় করে দেখাতে হয়, তখন প্রশ্ন জাগে আসলে কী চান মহসিন? হঠাৎই মহসিনের একটি প্রশ্নে সব পরিষ্কার হয়ে যায়। তিনি ফয়জুল্লাহর ছোটো ছেলেকে প্রশ্ন করেন, তোমার বাবার সম্পর্কে কী জানো? সে জবাব দেয়, ‘শুনেছি তিনি রাজনৈতিক বন্দি ছিলেন। মহসিন তাকে আর কোনো প্রশ্ন করেন না। তার মানে কৌশলী মহসিন বুঝিয়ে দেন, তোমরাও দেখো যারা ইসলামি বিপ্লবের জন্য কারাভোগ করে রাষ্ট্রীয় পরিবর্তন এনেছে তারা ভালো নেই। জীবনযাপনের জন্য, সন্তানদের ভবিষ্যতের জন্য তারা আজ দিশেহারা। কিন্তু সরাসরি সে বিষয়েও কথা বলার কোনো অবকাশ নেই।

তবে ব্যক্তিজীবনে মহসিন এ ধারা বেশিদিন অব্যাহত রাখতে পারেননি। ইসলামি বিপ্লবের পর থেকে তিনিও নানাভাবে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন। তার বেশকিছু চলচ্চিত্র রাষ্ট্রীয় সেন্সরবোর্ড আটকে দিয়েছে, তার ওপরও এনেছে নানা অভিযোগ। বাদ যায়নি তার মেয়ে সামিরার চলচ্চিত্রও। কিন্তু তারপরও দেশে থেকে কৌশলে কাজ করে যেতে চেয়েছিলেন তারা। কিন্তু রাষ্ট্রীয় কর্তারা এমন সব নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে থাকে, একসময় দেশ ছাড়তে বাধ্য হন তিনি। বর্তমানে ফ্রান্সে স্বেচ্ছা নির্বাসনে জীবন কাটাচ্ছেন মহসিন। তবে চলচ্চিত্রের মাধ্যমে বাস্তবতার ভিন্ন দিক তুলে ধরার সেই প্রবণতা তার এখনো অব্যাহত রয়েছে। মহসিনের ভাষায়,

মানুষকে কোনো ম্যাসেজ দিতে না, এমনকি তাদের সামনে বাস্তবতা তুলে ধরার জন্যও সিনেমা বানাই না আমি। আমি বাস্তবতার ভিন্ন অবস্থান দেখাতে চাই। কেননা, সেখানে সত্যের মতো কিছু নেই। সত্য কেবল একপাক্ষিক না, সত্যের আরেকটা দিকও সেখানে আছে। আমি সত্যের আলাদা দিক দর্শকদের দেখাতে চাই, যাতে তারা আরো বেশি গণতান্ত্রিক চিন্তার হয়। ... সত্য হলো স্রষ্টার হাতের এক আয়না, যা ভেঙ্গে গেছে। আর আমরা সবাই তার একটা টুকরো পেয়েছি। আমরা ভাবি, আমাদের হাতে যা আছে তা-ই সত্য। নাহ্! সবার হাতেই সত্যের টুকরো বা ভগ্নাংশ আছে। আপনি হয়তো বলতে পারেন, আপনার হাতে যে টুকরো আছে, তাতেই আপনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন; কিন্তু কেবল তাকেই আপনি সত্য বলতে পারেন না। আপনি যদি ভাবেন, সত্য কেবল এক ধরনের হয়; তাহলে সেখানে কোনো গণতন্ত্র, কোনো আলাপ চলে না। আমার কাছে সিনেমা হলো আলাপ বা কথোপকথন।

চলচ্চিত্রে নির্মাতার দায়

বলা হয়ে থাকে চলচ্চিত্র হলো ডিরেক্টরস মিডিয়াম। সেটা কেনো বলা হয় সালাম সিনেমাই এক্ষেত্রে উৎকৃষ্ট উদাহরণ। চলচ্চিত্রজুড়ে একজন অপেশাদার অভিনয়শিল্পীর কাছ থেকে কীভাবে অভিনয় করিয়ে নিতে হয়, মহসিন সেটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছেন। একই সঙ্গে কোনো মানুষের কাছ থেকে কীভাবে কথা বের করতে হয় সেটাও তিনি তুলে ধরেছেন। চলচ্চিত্রটি যেহেতু অনেকটা প্রামাণ্যচিত্র ঘরানার, ফলে অনেক সত্যই এখানে উঠে এসেছে। যখন এক নারী অভিনয়ের জন্য নয়, বরং স্বামীর কাছে যাওয়ার জন্য মহসিনের কাছে আসেন, তখন তাকে নানাভাবে প্রশ্ন করেন তিনি। এ সময় তার ব্যক্তিগত অনেক তথ্যই উঠে আসে। কিন্তু তিনি কেঁদে দেখাতে না পারায় তাকে ফিরে যেতে বলেন মহসিন। কিছুক্ষণ পরে তাকে ফের ডেকে এনে তার ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশের অনুমতি চান। ওই নারী জানান, যদি এতে তার উদ্দেশ্য সফল হয় তাহলে তিনি রাজি। মনে হতে পারে, চলচ্চিত্রের শুরুতে যেহেতু ঘোষণাই দেওয়া হয়, এই অডিশন ধারণ করে চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হবে, ফলে ওই নারীর কাছে তার তথ্য প্রকাশের অনুমতি নেওয়ার দরকারই ছিলো না। কিন্তু মহসিন সেটা করেননি। বিশ্বাস করে ওই নারী তার ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ করায় নির্মাতা হিসেবে মহসিনও সেই সততার পরিচয় দিয়েছেন।

অন্যদিকে চলচ্চিত্রের শুরু থেকেই মহসিন সবাইকে কান্নার অভিনয় করে দেখাতে বলেন। যারা পারে না, তাদের অধিকাংশকেই সরাসরি তিনি বেরিয়ে যেতে বলেন। অনেকে কাঁদতে পারলেও কিছুক্ষণ কথা বলার পর তাকে ফের কান্না শুরু করতে বললে তারা ব্যর্থ হয়ে ফিরে যায়। একসময় মনে হয় আসলেই কি যেকোনো মুহূর্তে কাঁদা সম্ভব? যদি সম্ভব না হয়, তাহলে মহসিন কেনো সবাইকে কাঁদার সক্ষমতা দিয়ে বিচার করছেন? একটু পরই কাঁদতে না পারায় যখন একজনকে চলে যাওয়ার জন্য বলা হয়, তখন তিনি মহসিনের এ বাছাই প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি মহসিনকে বলেন, ‘আপনার কোনো পেশাদার অভিনয়শিল্পী কি যখন-তখন এভাবে কেঁদে দেখাতে পারবে?’ সঙ্গে সঙ্গে নিজের মনেও এ নিয়ে প্রশ্ন জাগে। এবার কী জবাব দিবেন মাখমালবাফ? সত্যিই তো সবার দ্বারা কি এটা সম্ভব? কিন্তু সেটাও মিথ্যা প্রমাণ করে দেন মহসিন। তিনি তার পাশে থাকা প্রোডাকশনের কাজ করা জয়নালকে ডেকে বলেন, ‘আমি এক থেকে ১০ পর্যন্ত গুনবো। আপনি এর মধ্যে কেঁদে দেখান। মহসিন পাঁচ পর্যন্ত গোনার আগেই অঝোরে কাঁদতে থাকেন জয়নাল। মহসিন তাকে জিজ্ঞেস করেন, তিনি এর আগে কোনোদিন অভিনয় করেছেন কি না? জয়নাল জবাব দেন, ‘কোনোদিন করিনি, সেটা আমার চেয়ে আপনিই ভালো করে জানেন।

তবুও চলচ্চিত্রে কখনো কখনো মহসিনকে স্বেচ্ছাচারী মনে হয়। জয়নাল কেঁদে দেখালেও তিনি যেভাবে অভিনয়শিল্পী নির্বাচন করছেন, সেখানে তাকে কিছুটা হলেও কর্তৃত্ববাদী দেখায়। চলচ্চিত্রের শেষ পর্যায়ে এসে এ প্রশ্নেরও উত্তর দেন মহসিন। তিনি স্কুল পালিয়ে আসা দুই শিক্ষার্থীকে তার আসনে অভিনয়শিল্পী নির্বাচনের দায়িত্ব দিয়ে সরে যান। তারাও প্রথমে আগতদের কাঁদতে বলেন, কিন্তু আগতরা সেটা করতে ব্যর্থ হলে কখনো কখনো তারা উত্তেজিত হয়ে ওঠে। এবার এ দুই শিক্ষার্থীকেও কর্তৃত্ববাদী মনে হয়! মহসিন ফিরে এলে তাদের অনুভূতি জানতে চাইলে তারা জানায়, আসলেই বিষয়টি সহজ নয়। চলচ্চিত্রজুড়ে মহসিন নিজেকে এমনভাবে উপস্থাপন করেছেন সেটা এককথায় অসাধারণ। সেই সঙ্গে আনকোরা মানুষ দিয়ে এভাবেও যে চলচ্চিত্র নির্মাণ করা যায় সেটা তিনি প্রমাণ করে দিয়েছেন। এছাড়া পুরো চলচ্চিত্রটি তিনি নির্মাণ করেছেন ‘প্রেজেন্স উইদাউট প্রেজেন্স থিয়োরি (এই কৌশলে এমন চরিত্র তৈরি করা হয়, যাকে দর্শক দেখতে পায় না, কেবল তার কণ্ঠস্বর শুনতে পায়) দিয়ে। যেটা সালাম সিনেমাকে আরো উচ্চ মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছে। ইরানি চলচ্চিত্রের নব্য-বাস্তববাদ ধারার এ চলচ্চিত্রনির্মাতা যেভাবে ক্যামেরাকে কলমের মতো নিজের ইচ্ছানুযায়ী ব্যবহার করেছেন তাতে কোথাও মনে হয় না তারা পেশাদার অভিনয়শিল্পী নন। প্রত্যেকে নিজ নিজ দৃশ্য ফুটিয়ে তুলেছেন। একই সঙ্গে মনে হয়, তাদের প্রত্যেকের ঘটনাও যেনো একেকটি চলচ্চিত্রের গল্প। যার কৃতিত্ব কেবলই নির্মাতার।

শেষ ভালো যার, সব ভালো তার

চলচ্চিত্রের শুরু থেকে প্রত্যেকের অভিনয় দেখে মনে হয়, আসলে এটি প্রামাণ্যচিত্র নাকি কোনো কাহিনিচিত্র? বাস্তব নাকি কাল্পনিক? প্রত্যেকের প্রশ্নের উত্তর যেমন আলাদা, তেমনই চলচ্চিত্রের গল্পটাও বৈচিত্র্যপূর্ণ। প্রতিটি দৃশ্যেই নতুন নতুন ভাবনার যোগান দেয়। ফলে চলচ্চিত্রটি এক ঘণ্টা ১১ মিনিটের হলেও শেষ হওয়ার পর কেবল ছোট্ট কোনো গল্পের অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার মতোই মনে হয়; মনে গেঁথে যায় সমগ্র ইরানের চলচ্চিত্র, রাষ্ট্র ও সমাজের পুরো চিত্র; সঙ্গে নিজের দেশের পরিস্থিতিও মেলানোর চেষ্টা করি। কিন্তু আশা জাগানিয়া কোনো কিছুরই খোঁজ মেলে না।

শেষ করছি মহসিন মাখমালবাফের কথা দিয়েই। তিনি কখনো কোনো কিছুতেই হাল ছাড়েননি। রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ থেকে নিজের চলচ্চিত্র বাঁচাতে একমাত্র বাড়িটিও বিক্রি করে প্রযোজকের অর্থ পরিশোধ করে ভাড়া বাসায় থেকেছেন। সুযোগ বুঝে তার লেখনী ও চলচ্চিত্রে অসঙ্গতি তুলে ধরেছেন। কারণ তিনি মনে করেন, ‘সার্বিক দিক বিবেচনায় যে সময়ে আমরা বেঁচে আছি, বাতাস সবদিক থেকে বেশ জোরালোভাবেই বইছে। কিন্তু আমরা যদি নিজেদের জন্য ভাবতে পারি, যদি গভীরভাবে ভাবতে পারি, আমরা দৃঢ়চেতা হতে পারবো। দাঁড়াতে পারবো নিজের পায়ের উপর। তখন কোনো বাতাসই আমাদের অন্যত্র উড়িয়ে নিতে পারবে না।

লেখক : ইব্রাহীম খলিল, বর্তমানে বণিক বার্তা সংবাদপত্রে শিক্ষানবিশ সহ-সম্পাদক হিসেবে কর্মরত আছেন।

ibrahimrumcj@gmail.com

https://www.facebook.com/ibrahimmcj

 

তথ্যসূত্র

১. https://www.banglanews24.com/art-literature/news/bd/79036.details; retrieved on: 05.04.2019

২. https://www.banglanews24.com/art-literature/news/bd/79036.details; retrieved on: 05.04.2019

৩. https://www.banglanews24.com/art-literature/news/bd/79036.details; retrieved on: 05.04.2019

 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন