২য় সংখ্যা , জানুয়ারি ২০১২
তারেক মাসুদের রূপবান এবং কিছু ধূসর-টাটকা স্মৃতি
এক.শিল্পকলা একাডেমীর স্টুডিও থিয়েটার লাগোয়া ছাদে বসে ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টিতে গরম চায়ে চুমুক দিতেই ভাইব্রেশনে রাখা মুঠোফোনটি কেঁপে উঠল। পকেট থেকে বের করে দেখি তারেক ভাই ফোন করেছেন। ফোন ধরতেই হাসিমাখা ভরাট কণ্ঠস্বর, ‘জরুরি কথা আছে, এক্ষুনি চলে আসো।’ তারেক ভাইকে না বলার
গত বছর ১৩ আগস্ট সকাল সাড়ে দশটার দিকে বিভাগে বসে প্রথম খবরটি পাই। আমার একজন সাবেক শিক্ষার্থী বর্তমানে একটি টেলিভিশন চ্যানেলের রিপোর্টার, ফোন করে জানান চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ নেই। আঁতকে উঠে ‘কীভাবে’ জিজ্ঞাসা করতেই শুনি, সড়ক-দুর্ঘটনা কেড়ে নিয়েছে তাকে ও মিশুক মুনীরসহ
সুখ জাগানিয়া কিছু স্মৃতি ও অতঃপর
প্রিয় তারেক স্যার,আমি জানি, আমার এই চিঠি আপনি পড়বেন না। কিন্তু তারপরও এই চিঠি আমি লিখছি। আগামী কোনোদিনও হয়ত লিখব। আমার জীবনের সব স্বপ্ন-সাধ-বাসনা নিয়ে যখন খুব টানাপোড়েনের মধ্যে দিয়ে যেতে শুরু করেছি, আপনার সঙ্গ পেলাম ঠিক তখন। পুরনো চিন্তা চেতনা জীর্ণ ইচ্ছে বাসনাকে
২০১০ সালের মার্চের কোনো এক রাতের ঘরোয়া মিটিংয়ে অতিথি আধপাকা চুলের হালকা পাতলা গড়নের এক মানুষ। সেদিন খুব বেশি কথা বললেন না তিনি, শুধু শুনলেন আর মাঝে মাঝে হ্যাঁ-হু শব্দে দু-একটির উত্তর দিয়ে শেষ করলেন। এটিএন নিউজ এর শুরুর দিকের সেই মিটিংয়ে ওই মানুষটির উপস্থিতিতে
নক্ষত্রের পতন ও দুর্ভাগা চলচ্চিত্র
এই সময়, এই বাস্তবতায়; এ ধরনের শিরোনামের বাইরে আর কিছু দেয়া যায় কিনা আমার জানা নেই। অবস্থাটা এমন দাঁড়িয়েছে, এই পরিস্থিতিতে তার চলে যাওয়ার ক্ষতি ব্যাখ্যা করাও অতিকথন। চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সব বয়সী মানুষের এক ধরনের আশ্রয়, ভরসার জায়গাটা হঠাৎ কোথায় যেন হারিয়ে
প্রেক্ষাগৃহ বন্ধের মিছিল : নতুন প্রদর্শনী, ভিন্ন চিন্তা
সংবাদটা শঙ্কিত হওয়ার মতো। যে দেশে একসময় হাজারের উপর প্রেক্ষাগৃহ ছিল, যেখানে প্রতি ঈদে এক ডজনের কমে সিনেমা মুক্তি পেত না; প্রতিটি সিনেমার প্রিন্ট করতে হতো কমপক্ষে অর্ধশত। সেই দেশে ঈদে মুক্তি পাওয়া মাত্র নয়টি সিনেমার জন্য ৬৪ জেলার মধ্যে ২২ জেলায় প্রেক্ষাগৃহ পাচ্ছেন
‘ভারতীয় চলচ্চিত্র আমদানি’ : নয়া শিল্প আকাঙ্ক্ষার চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত
ক্ষমতা সর্বব্যাপী, সর্বত্র তার বিচরণ। বিচিত্র অসংখ্য রূপে তার মূর্ততা। কখনো মালিকানা নামে, কখনো পুঁজি নামে, কখনো লৈঙ্গিক কর্তৃত্বের নামে, আবার কখনোবা ভাষা-সংস্কৃতি-আধিপত্য নামে তার বহিঃপ্রকাশ। নিও-লিবারেল যুগে ক্ষমতার সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের রূপটিকে বাংলাদেশ নামক
চলচ্চিত্রে মা : সর্বসহা সর্বহারা জননী, তুমি মানুষ হওনি
দৃশ্যপট এক. বৃক্ষ-লতাহীন তুষারে ঢাকা পাহাড়। পাহাড়ের গা বেয়ে নামছে কিছু মানব মূর্তি। ওদের শরীর ঢাকা আছে বরফের মতোই সাদা বৃষচর্মে; তাদের হাতের অস্ত্রগুলিও যেন ধবধবে সাদা। এই পরিব্যাপ্ত শ্বেত তুষারের ক্ষেত্রে আন্দোলিত মূর্তিগুলিকে ঠিক চিনে ওঠা দায়! আরও কাছে গিয়ে
জনপ্রিয় নায়ক বনাম এক নায়ক তন্ত্র
অনেকেই অনেক দূর এগিয়েছে, কেবল আমরাই পিছিয়েছি- এই বাস্তবতা আমাদের শিল্প-সংস্কৃতির যেক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি খাটে সেই ক্ষেত্রটির নাম যে চলচ্চিত্র তা খুব একটা বিতর্কের দাবি রাখে না। বিনোদনের এই মাধ্যমটি সম্পর্কে এ কথা বলাও মনে হয় খুব একটা ভুল হবে না যে, সেই ১৯৫৬
‘গুপী বাঘা’ ত্রয়ীর সমকালীন পাঠ
সত্যজিৎ রায়কে উপমহাদেশের বাংলা সিনেমার অন্যতম দিকপাল বলা হয়। অনেকে আবার তাকে ‘মানবীয় আবেগের দলিল’ এর রচয়িতাও মনে করেন। বিশ্ব সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান যেমন অনস্বীকারয, তেমনি চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে সত্যজিৎ এর অবদান স্বীকার না করে উপায় নেই। তার পথের পাঁচালী বাংলা
টালিগঞ্জের চলচ্চিত্র : ‘শ্লীলতা’, ‘অশ্লীলতা’র দ্বন্দ্বে পরাভূত বাস্তবতা
সৃষ্টির শুরু থেকে মানুষ ক্রমশ বিবর্তনের মধ্য দিয়ে নিজেকে বিকশিত করেছে। আধুনিক, শিক্ষিত, বিবেকবান ও সামাজিক মূল্যবোধের অধিকারী এ মানুষ সর্বত্র স্বীকৃত। সমাজের নির্ধারিত আইন-কানুন যথারীতি মেনে চলার মধ্যে দিয়ে ব্যক্তি-মানুষ নিজেকে শালীনতাবোধসম্পন্ন সামাজিক জীব
বিপ্লবীরা স্বৈরশাসকদের বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করে দেশকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করেন। সাধারণত এমনই ঘটে। কিন্তু এখন সময় বদলেছে; শুধু অস্ত্র দিয়েই শত্রুর মোকাবেলা করছেন না সংগ্রামী, বিপ্লবীরা। দেশের মানুষের মুক্তি, স্বাধীনতা, আশা, আকাঙ্খা ও বিবেকের চিন্তার
সাহিত্য, সিনেমা ও চিত্রনাট্যের ভাষা
সিনেমা করার আগে পরিচালককে যেটা সবচেয়ে আগে ঠিক করে নিতে হয় তা হলো কী বিষয় নিয়ে তিনি সিনেমাটি বানাবেন তা বেছে ফেলা। বিষয় কাহিনীনির্ভর হতে পারে এবং কাহিনীর একশ ভাগই উঠে আসতে পারে পুরাণ বা ইতিহাস থেকে, চিরায়ত বা সামপ্রতিক সাহিত্য থেকে, এমন কী হবু লেখকের অপ্রকাশিত কোনও
ইতি মৃণালিনী : সাধারণ নারীর অসাধারণ বয়ান
পাঠকদের অনেকেরই নিশ্চয় বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় (বনফুল) এর নিমগাছ গল্পটি পড়া আছে। গল্পটিতে সবাই নিমগাছের গুণের কথা বলে। এমনকি বিজ্ঞ থেকে অজ্ঞ, সবাই প্রয়োজনে গাছটি ব্যবহারও করে। এই গাছ বাড়ির পাশে গজালে বিজ্ঞরা খুশিই হন। বলে- ‘নিমের হাওয়া ভালো, থাক্, কেটো না।’ কাটে না, কিন্তু
এখন তো কাট্ অ্যান্ড পেস্টের যুগ : রুনা লায়লা
উপমহাদেশের অন্যান্য চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রির মতো, ঢাকাই চলচ্চিত্রে গানের বড় একটা ভূমিকা থাকায় স্বভাবতই ভাল গায়ক বা গায়িকার বড় প্রয়োজন আগেও ছিল, এখনো আছে। যারা দশকের পর দশক ঢাকাই চলচ্চিত্রের প্লেব্যাক জগতের প্রতিনিধিত্ব করছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম একজন হলেন রুনা
‘৪০ বছরেও যদি একটা ছেলে হাঁটতে না পারে, তাহলে তাকে রেখে লাভ কী?’
স্বাধীন বাংলাদেশে প্রযোজনা শিল্পের অন্যতম পথিকৃত হাবিবুর রহমান খান। মুক্তিযুদ্ধ থেকে ফিরে ১৯৭২ সালে হাবিবুর রহমান খান জড়িয়ে পড়েন চলচ্চিত্র প্রযোজনা ব্যবসায়; গড়ে তোলেন প্রযোজনা ও পরিবেশনা প্রতিষ্ঠান ‘আশীর্বাদ চলচ্চিত্র’ জন্ম ঢাকার বিক্রমপুরে ১৯৪৫ সালে। অসম্ভব
পরাজয়, ভুল ও প্রবঞ্চনার সমন্বয়ে গড়ে ওঠে ইতিহাস : ইলমাজ গু’নে
‘ভেঙ্গে ফেল জানালা, যাতে পাখিরা নিজেদের মুক্ত করতে পারে’ এই কথার ওপর দাঁড়িয়েই ইলমাজ গু‘নে নির্মাণ করেছিলেন ইয়োল (দ্য ওয়ে) চলচ্চিত্রটি। জেলের ভিতর বন্দীদের জীবনকে কেন্দ্র করে নির্মিত এ চলচ্চিত্রের মাধ্যমেই গু‘নে তুলে ধরেছিলেন তুরস্কের সার্বিক পরিস্থিতি।
চলচ্চিত্রকে পূর্ণদৈর্ঘ্য করলেন যিনি
দীর্ঘ পথ অতিক্রম করেছে চলচ্চিত্র। সময়ের এই পথচলায় মাঝে মাঝে কিছু লোকের সক্ষমতা গতি বাড়িয়ে দিয়েছিল। তাদের উপেক্ষা করে যেমন চলচ্চিত্রের ইতিহাস রচনা চলে না, তেমনি চলে না চলচ্চিত্র পঠন-পাঠন চর্চাও। তাই ম্যাজিক লণ্ঠন পরিবার তাদের সাপ্তাহিক পাঠচক্রে নিয়মিতভাবেই
চলচ্চিত্র শিক্ষা ও অল ইউনিয়ন স্টেট ইন্সটিটিউট অব সিনেমাটোগ্রাফি
উনিশ শতকের শেষ দশকে প্রাত্যহিক জীবনের চলমান চিত্র প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্র নামক শিল্পের যাত্রা শুরু। আপাত শুরুটা উনিশ শতকের শেষ দশক মনে হলেও আসলে শুরু হয়েছিল কিন্তু তারও কয়েক’শ বছর আগে। মানুষ যখন আলতামিরা গুহায় ছয় পায়ের বাইসনের ছবি এঁকেছিল, তখন থেকেই
ঋতুপর্ণের চোখের বালি : বিনির্মাণের ধোয়ায় প্রাচ্যে-নারীর ধবধবে পিঠ
সাহিত্য থেকে চলচ্চিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে তিনটি পদ্ধতি ব্যবহারের কথা বলেছেন বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার সের্গেই আইজেনস্টাইন। চিত্রপরিচালক সাহিত্য থেকে পুরোপুরি গ্রহণ করতে পারেন, আংশিক নিতে পারেন, আরেকটি হলো পয়সার জন্য করে যাওয়া। তবে এর বাইরে গিয়েও আরও একটি পদ্ধতি এক্ষেত্রে
ঋত্বিকমঙ্গল : অগোছালো মানুষের গোছালো পাঠ
ঋত্বিক ঘটক নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র নাগরিক মুক্তি পেয়েছিল তার মৃত্যুর এক বছর পর ১৯৭৭ সালে। পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে চলচ্চিত্রটির সুরক্ষার ব্যবস্থা নেয়া হয় এবং একটি প্রিন্ট বের করা হয়। অগোছালো জীবনের এই মানুষটি নির্মাণ করেন আটটি পূর্ণদৈর্ঘ্য
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম : নতুন সম্ভাবনা, নতুন সংকট
প্রাযুক্তিক উৎকর্ষের এই যুগে এসে মানুষ ক্রমাগত সম্মিলিত হচ্ছে আন্তর্জাল১ বা ইন্টারনেটের ছায়াতলে। পরিশ্রমী মানুষ তার মেধা-মননের একটা বড় অংশের প্রয়োগে তৈরি করেছে আন্তর্জাল নামক এক চমকপ্রদ পরিসর। যে পরিসরে নব্য যুক্ত হওয়া একটি ধারার নাম সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং
কোনো বস্তুর ক্ষেত্রে আধেয় যেমন তার অন্তর্গত বস্তুপুঞ্জ, তেমনি একটি টেলিভিশন চ্যানেলের আধেয় তার অনুষ্ঠানপুঞ্জ। যে অনুষ্ঠানপুঞ্জের মাধ্যমে বোঝা যায় ওই চ্যানেলের সামগ্রিক চরিত্র। অর্থাৎ কোনটি নিউজ চ্যানেল, কোনটি স্পোর্টস চ্যানেল বা কোনটি বিনোদন চ্যানেল। বাংলাদেশের
এফএম রেডিও : ‘ভূত’ আর ‘লাভ’ এর সমান্তরাল চলা
একসময় এদেশে রেডিও ছিল অত্যন্ত জনপ্রিয় গণমাধ্যম। কিন্তু গত দেড় দশকে এ সমপ্রচার মাধ্যমটি অত্যন্ত অজনপ্রিয় হয়ে ওঠে। জনপ্রিয়তা হারানোর অনেকগুলো কারণের মধ্যে অন্যতম হলো, গতানুগতিক ‘বস্তাপঁচা’ আধেয় এবং ৯০’র দশকের পর ঘরে ঘরে টেলিভিশন ও স্যাটেলাইট চ্যানেলের প্রবেশ।
ছেড়ে দে মা হাতের বাঁধন : টেলিভিশন বিজ্ঞাপনে শিশুদের উপস্থাপনা নিয়ে দুটো কথা
১৯৯৩ সালের ৯ অক্টোবর আমেরিকার ওহিও প্রদেশের মোরাইনে থেকে সংবাদ সংস্থা একটি খবর পাঠায়। খবরটি এমন- পাঁচ বছরের একটি শিশু আগুন নিয়ে খেলতে গিয়ে ঘরে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে, সেই আগুনে পুড়ে মারা গেছে তার ছোট বোন। ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে নামে পুলিশ। তদন্তের একপর্যায়ে পুলিশকে