সোহেল রানা
প্রকাশিত ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১২:০০ মিনিট
অন্যকে জানাতে পারেন:
সংবাদপত্রে সড়ক দুর্ঘটনা আর বজ্রপাতের প্রতিবেদনে কোনো ‘ভেদ’ নেই
সোহেল রানা

এই ছবিটি ইন্টারনেট থেকে নেওয়া হয়েছে
ভূমিকা
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে কিংবা প্রত্যক্ষ-শ্রোতা হিসেবে আমার দায়িত্ব যদি কেবল এই হয় যে, আমি যা দেখেছি অথবা যা শুনেছি শুধু তাই তুলে ধরবো; তবে কাজটা খুব জটিল কিছু নয়। নিরপেক্ষতার তকমা অর্জনও সহজ হয়ে দাঁড়ায়। কারণ, ঘটনাটি ঠিক না বেঠিক—সেই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া আমার কাজ নয়। কিন্তু যদি এ দায়িত্ব আমি স্বেচ্ছায় নিই যে, ঘটনার ঠিক-বেঠিকের সিদ্ধান্তও আমি দেবো; তবে কাজের পরিধি কেবল বাড়ে না, সেই সঙ্গে বিবেক-বিবেচনার আবির্ভাবও ঘটাতে হয়। সেক্ষেত্রে আরেকটা মুশকিল সামনে এসে দাঁড়ায়। কারণ, উচিত-অনুচিত রায় দিলেই ঘটনার অনুঘটকরা পক্ষে-বিপক্ষে ভাগ হয়ে যাবে।
এ অবস্থায় সত্য বলা (উচিত-অনুচিতসহ) সম্ভব, যদি সত্তার সুভাবের জায়গা থেকে আমি উচিতকে ধারণ করতে পারি। অর্থাৎ, আমার আমিত্বে দখলদার কে—তা একটা মৌলিক প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ায়। এই জবাবে ক্ষমতাসীন আসনে যদি ‘উচিত’ ব্যক্তিটি না থাকে, তবে ‘অনুচিত’ লোকটা টিকে থাকে, দখলে থাকে; বলা যায় খোদ ‘অনুচিত’ই উচিতের ভান ধরে। কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠতার বিচারে প্রতিষ্ঠিত ‘উচিত’-এর সামনে এই ‘অনুচিত’ অনেক সময় নিজেকে ‘উচিত’ দাবি করতে পারে না কিংবা করে না। তখন সে উচিত-অনুচিতের প্রশ্ন না তুলে, কেবল ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কিংবা প্রত্যক্ষ-শ্রোতা হিসেবে আবির্ভূত হয়। আর এই ঘটনা বা কাহিনি বর্ণনার সময় সে স্বনির্মিত ‘নায়ক’ চরিত্রে বেশি সময় দেয়, বেশি মনোযোগ দেয়।
সংবাদপত্রে প্রকাশিত সড়ক দুর্ঘটনার প্রতিবেদন পড়তে এবং বিশ্লেষণ করতে গিয়ে গণমাধ্যম সম্পর্কে আমার ভাবনায় যে সারাংশ জমা হয়েছে, তা মোটা দাগে উপরের অনুচ্ছেদ দুটি। আলোচনার পরবর্তী অংশে এই সারাংশের ভাব সম্প্রসারণ করতে চাই। এজন্য উদ্দেশ্যমূলক নমুনায়নের মাধ্যমে সড়ক দুর্ঘটনা সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন ও সম্পাদকীয় বাছাই করেছি।
সড়ক দুর্ঘটনার খবরে ‘নায়ক’ যারা
নায়ককে আমি দেখেছি শ্রেণির দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। তাই শ্রেণি নিয়ে দু-চার কথা অপ্রাসঙ্গিক হবে না। সাদামাটাভাবে বলতে গেলে
কোনো বৈশিষ্ট্য বা গুণের ভিত্তিতে যেকোনো সমষ্টিকে শ্রেণী বলে অভিহিত করা চলে। ‘শ্রেণী’ শব্দটি তত্ত্ব এবং বিজ্ঞানের বাইরে আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের একটি বহুল ব্যবহৃত শব্দ। যুক্তিবিদ্যায় কোনো জাতিবাচক পদকে শ্রেণী বলা হয়। ‘মানুষ’, ‘পশু’, ‘বাঙালি’, ‘হিন্দু’, ‘মুসলমান’—ইত্যাদি পদ শ্রেণীবাচক পদ। কোনো বিশেষ গুণের ভিত্তিতে একাধিক ব্যক্তি বা উপাদানের ওপর প্রযোজ্য নাম।১
এখানে শোষক-শোষিতের বিষয়টি কিংবা শ্রেণির সঙ্গে অর্থনীতির বিষয়টি প্রধান হয়ে ওঠেনি। তবে মার্কস পাঠে শ্রেণি সম্পর্কে আমাদের ভিন্ন ধারণা মেলে। মার্কসীয় তত্ত্বে ‘শ্রেণি’ শব্দের ব্যবহার অর্থনৈতিক। জীবন ধারণে সম্পদের মালিকানা ও অমালিকানার ভিত্তিতে কোনো সমাজের মানুষকে চিহ্নিত করার তত্ত্ব।
মার্কসবাদের মতে, মনুষ্যসমাজের আদিতে সামাজিক সম্পদের কোনো ব্যক্তিগত মালিকানা ছিল না। সে হিসেবে সেই আদি কালের মনুষ্যসমাজ শ্রেণীহীন ছিলো বলে অনুমান করা চলে। জীবনযাপনের হাতিয়ার বা যন্ত্রপাতির বিকাশের একটা বিশেষ পর্যায়ে সম্পদের ওপর ব্যক্তিগত মালিকানা প্রতিষ্ঠা করা যখন সমাজের কোনো অংশের পক্ষে সম্ভব হয়, তখনই সমাজে এরূপ অর্থনৈতিক শ্রেণীর উদ্ভব হয়। এবং তারপর থেকে সমাজ বিকাশের প্রধান চালিকা শক্তি হিসেবে সম্পদের এরূপ মালিকশ্রেণী এবং সম্পদের মালিকানাবিহীন সম্পদহীন শ্রেণীর মধ্যকার দ্বন্দ্ব এবং সংগ্রাম কাজ করে আসছে বলে মার্কসবাদ মনে করে।২
এই মার্কসীয় সমাজ-ইতিহাস থেকে জানা যায়, সমাজের একেক পর্যায়ে একেক নামে দুই ধরনের শ্রেণি ছিলো, আছে। মোটা দাগে যাদেরকে শোষিত আর শোষক শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। তবে বর্তমান সমাজকে সেই অর্থেই আমি বুঝতে চাইবিশেষ করে এই লেখায়—‘আমি’ আর ‘অপর’ হিসেবে। অর্থাৎ, সংবাদের ‘আমি’ চরিত্রের মধ্যে কারা কারা পড়ে; আর ‘অপর’ চরিত্রের মধ্যে কারা কারা পড়ে—তা সড়ক দুর্ঘটনার প্রতিবেদন থেকে উপলব্ধির একটা চেষ্টা করেছি।
‘প্রথম আলো’র শেষ পৃষ্ঠার উপরের ভাঁজে এক কলামে ৪ নভেম্বর ২০১৫ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত একটি খবরের শিরোনাম—‘‘ট্রাকের ধাক্কায় শিল্পপতি তাজুল ইসলাম নিহত’। শেষ পৃষ্ঠায় স্থান পাওয়ার কারণ অনুসন্ধানে পুরো খবর পড়ে জানা গেলো, ‘শিল্পপতি’ই তার সবচেয়ে বড়ো পরিচয় (শিরোনামও তা-ই বলে)। ‘সমকাল’ ১৪ ডিসেম্বর ২০১৫ খ্রিস্টাব্দে শেষ পৃষ্ঠায় এক কলামে একটি খবর প্রকাশ করে, যার শিরোনাম ‘ঘাতক ট্রাক এবার কেড়ে নিল সাংবাদিক ফারুকের প্রাণ’। এখানে একজন শিল্পপতি, আরেকজন সাংবাদিক। বিরাজমান সমাজব্যবস্থায় দু’জনই সংবাদপত্রের ‘আমি’র কাতারে পড়ে। শ্রেণিগত জায়গা থেকে দেখলে, এই দুইয়ের মধ্যে একটা মিথোজীবিতামূলক সম্পর্কও আছে। এবং রাষ্ট্র ক্ষমতায় যারা, তাদের সঙ্গেও এদের সম্পর্কটা একেবারে খারাপ না।
এবার কাঠামোর বাইরের দিকে কিংবা ‘অপর’-এর দিকে নজর দেওয়া যাক। ‘প্রথম আলো’ ২৮ নভেম্বর ২০১৫ খ্রিস্টাব্দে পৃষ্ঠা ৫-এ শিরোনাম করেছে ‘দুই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ নিহত ২’। সংবাদের শুরুটা এ রকম—‘নরসিংদীতে বালুবাহী ও রডবোঝাই দুটি ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে দুই ট্রাকেরই চালক নিহত হয়েছেন’।’ ১২ নভেম্বর ২০১৫ খ্রিস্টাব্দে ‘সমকাল’ পৃষ্ঠা ৭-এ প্রকাশ করে ‘সড়ক দুর্ঘটনা : মির্জাপুরে নিহত ৪’।
এ রকম আরো অসংখ্য শিরোনাম পাওয়া যেতে পারে। এখানে একটা বিষয় লক্ষণীয় যে, ক্ষমতা কাঠামোর বাইরের কেউ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হলে, তখন খবরটা ছাপানোই বড়ো কথা। হাজিরা দেওয়া বলতে যা বোঝায় আর কি। শিরোনামে হতাহতদের কোনো পরিচয় খুঁজে পাওয়া যায় না; তা নিহত একজন হোক আর ১০ জন হোক! কিন্তু হতাহতের মধ্যে ‘বিশেষ’ কেউ থাকলে তার পরিচয় শিরোনামেও থাকে, সংবাদের শরীরেও (বডি) থাকে। সাংবাদিক ও শিল্পপতি নিহত হওয়ার খবরই তার প্রমাণ। আবার কয়েকজন মারা গেলে তার মধ্যে নিজ কমিউনিটির কেউ থাকলে সংবাদপত্র তার মূল্যায়ন করতেও ভোলে না।
১০ নভেম্বর ২০১৫ খ্রিস্টাব্দে ‘প্রথম আলো’ পৃষ্ঠা ৫-এ প্রকাশ করে ‘বাসচাপায় জে এস সি পরীক্ষার্থীসহ নিহত ২’। এ রকম ‘‘প্রকৌশলীসহ’, ‘শিক্ষকসহ’, ‘নারী ও শিশুসহ’ কিংবা ‘পুলিশসহ’ টাইপের সংবাদ শিরোনাম অহরহই চোখে পড়ে। কিন্তু ‘‘কৃষকসহ’, ‘শ্রমিকসহ’, ‘দিনমজুরসহ’—’এমন শিরোনাম চোখে পড়ে না বললেই চলে। উদাহরণ হিসেবে ‘‘সমকাল’-এর ‘সড়ক দুর্ঘটনা : মির্জাপুরে নিহত ৪’ প্রতিবেদনটির কথা বলা যেতে পারে। সংবাদের ভিতরে নিহতদের পরিচয় সম্পর্কে বলা আছে‘নিহতদের মধ্যে ছিলেন লেগুনাচালক দিলীপ, শুভুল্যা গ্রামের মিজানুর রহমানের ছেলে সজল, চড়পাড়া গ্রামের শিমুল ও সরিষাদাইড় গ্রামের পরেশ সরকারের ছেলে হারাধন সরকার।’ এখানে সজল, শিমুল কিংবা হারাধনের কোনো পরিচয় নেই। তবে আন্দাজ করে বলা যায় যে, এরা পেশায় আর যাই হোক, শিল্পপতি কিংবা সাংবাদিক নন। কৃষক কিংবা শ্রমিক জাতের কেউ হবে হয়তো।
এবার ‘‘বাসচাপায় জে এস সি পরীক্ষার্থীসহ নিহত ২’ প্রতিবেদনটি দেখা যাক। খবরের ভিতরে দেখা গেলো নিহত অন্যজন হলেন রিকশাচালক আইনউদ্দিন। তবে তার আগের লাইনে লেখা আছে ‘নিহত পরীক্ষার্থীর নাম রিফাত আহমেদ (১৩)’। এরপর আছে আইনউদ্দিনের নাম। কিন্তু শিরোনামটা উল্টোও হতে পারতো—‘‘বাসচাপায় রিকশাচালকসহ নিহত ২’; কিন্তু তা হয়নি। মালিকানা কিংবা ক্ষমতা কাঠামোর বাইরে গিয়েও কিছু সম্পর্ককে সংবাদপত্র মূল্যায়ন করে। এর মধ্যে অন্যতম হলো ভোক্তা সম্পর্ক। সংবাদপত্রের মূল্য বোঝে, পড়তে জানে—এমন যে কেউ পত্রিকার ভোক্তা হতে পারে। সেই হিসেবে ‘‘শিক্ষিত’ জে এস সি পরীক্ষার্থী এবং দেশব্যাপী তার সহপাঠী ও তাদের অভিভাবকদের মূল্য সংবাদ বিক্রেতাদের কাছে অনেক বেশি। সেই দিক থেকে ‘অশিক্ষিত’ রিকশাচালক কিংবা কৃষকের দাম তাদের কাছে কম। আবার বেশিরভাগ গণমাধ্যমের মালিক হলো পুঁজিপতি। সুতরাং উৎপাদন সম্পর্কের ভিত্তিতে গণমাধ্যম-মালিকের বিপরীতে শ্রমিকশ্রেণির (রিকশাচালক কিংবা গার্মেন্ট শ্রমিক) অবস্থান।
আরেকটা বিষয় লক্ষণীয়, সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিকভাবে ‘বড়ো’ কেউ নিহত না হলে কিংবা দুর্ঘটনার ভয়াবহতা অপেক্ষাকৃত কম হলে সড়ক দুর্ঘটনাকে স্রেফ বজ্রপাতের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে দেখার প্রবণতা আছে গণমাধ্যমের। আর এই ‘বড়ো’ কেউ মারা গেলেই কেবল সড়কের নকশার ত্রুটি, চালকের অনভিজ্ঞতা, ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলাপ ওঠে। অন্যথায় ‘ছোটোখাটো’ সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে ‘‘মানুষকে ভাবতে শেখানো হয়েছে, মানুষের ভাগ্যে যা আছে তাই হবে, এ নিয়ে দুঃখ করে লাভ নেই, এর প্রতিকারের চেষ্টা করারও কোনো দরকার নেই।’৩ সড়ক দুর্ঘটনায় স্থানিকতার ‘অপর’ও চোখে পড়ার মতো। এই যেমন রাজধানীতে বাসচাপায় কোনো শিক্ষার্থী নিহত হলে তার মূল্যায়ন এক রকম; আবার রাজধানীর বাইরে হলে আরেক রকম! এর কারণ একাধিক হতে পারে। তবে এই মূল্যায়নের শুরু সংবাদপত্রের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো থেকেই। সংবাদপত্রের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোয় কেন্দ্রীয় বার্তা বিভাগ (সেন্ট্রাল ডেস্কও বলা হয়) ও মফস্বল ডেস্ক বলে দুটি বিভাগ থাকে। এখানে মফস্বল ডেস্ককে দেখা হয় কেন্দ্রীয় বার্তা বিভাগের ‘অপর’ হিসেবে। এ অবস্থায় সড়ক দুর্ঘটনায় কৃষকের মৃত্যু হলে তা দেখভাল করার দায়িত্ব পায় মফস্বল ডেস্ক। আর শিল্পপতি মারা গেলে তা যায় সেন্ট্রাল ডেস্কের হাতে।
সংবাদের গভীরতা
একদিক থেকে দেখলে সংবাদপত্রে প্রকাশিত বেশিরভাগ সড়ক দুর্ঘটনার প্রতিবেদন ‘পরিপূর্ণ’; সংবাদের আকার ছোটো হলেও। প্রতিবেদনগুলোতে ঘটনার বিবরণে কোনো ঘাটতি চোখে পড়ে না। কে, কখন, কোথায়, কীভাবে, কী কারণে—সব প্রশ্নের জবাবই থাকে। এ তো গেলো পরিপূর্ণতার প্রশ্ন। বস্তুনিষ্ঠতার প্রশ্নেও সড়ক দুর্ঘটনার খবর ‘কৃতকার্য’। উদাহরণ হিসেবে ‘প্রথম আলো’র ‘উত্তরায় গাড়ির ধাক্কায় মসজিদের খাদেমের মৃত্যু’ শিরোনামের প্রতিবেদনটির কথাই ধরা যাক। পাঠকের সুবিধার জন্য পুরো প্রতিবেদনটিই এখানে তুলে দেওয়া হলো—
উত্তরায় গাড়ির ধাক্কায়
মসজিদের খাদেমের
মৃত্যু
নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানার বিজিবি মার্কেটের সামনে একটি দ্রুতগামী গাড়ির ধাক্কায় আবদুল হক (৫২) নামের এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সোমবার সকালে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।
উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ জানায়, নিহত আবদুল হক উত্তরা সাত নম্বর সেক্টরের বড় মসজিদের খাদেম ছিলেন। গতকাল সকাল সাড়ে নয়টার দিকে উত্তরা পশ্চিম থানার বিজিবি মার্কেটের সামনে রাস্তা পারাপার হচ্ছিলেন তিনি। ওই সময় একটি দ্রুতগামী গাড়ি তাঁকে ধাক্কা দেয়। এতে তিনি ঘটনাস্থলে মারা যান। নিহত আবদুল হক মসজিদের কাছে একটি টংয়ের দোকানে টুপি, তসবিহ, জায়নামাজ, কোরআন শরিফ ইত্যাদি বিক্রি করে জীবন চালাতেন। তিনি মসজিদের কাছে একটি বাড়িতে পরিবার নিয়ে ভাড়া থাকতেন।
খেয়াল করুন, এই সংবাদটিতে ‘প্রথম আলো’ কোনো ভুল-মিথ্যা-উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তথ্য দেয়নি। অর্থাৎ, সংবাদটি নিঃসন্দেহে ‘বস্তুনিষ্ঠ’। আবার তথ্যের তেমন কোনো ঘাটতিও চোখে পড়ছে না। খুঁজলে এ রকম অনেক ‘বস্তুনিষ্ঠ’ ও ‘‘পরিপূর্ণ’ প্রতিবেদন পাওয়া যাবে সংবাদপত্রে। কিন্তু প্রতিবেদনের এই মূল্যায়ন তখনই খাটবে, যখন সড়ক দুর্ঘটনাকে কেবল বজ্রপাতের (যদিও দুর্যোগের পিছনেও মানুষের নানা কর্মকাণ্ড দায়ী) মতো নিছক দুর্ঘটনা হিসেবেই দেখা হবে। আর যদি সড়ক দুর্ঘটনার কারণ বিচারের ক্ষেত্রে সামগ্রিক বাস্তবতা খুঁটিয়ে দেখা হয়, তবে এ আর কেবল নিছক ‘কপালের লিখন’ থাকে না। কারণ, একজন বাসচালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স থেকে শুরু করে রাস্তার নির্মাণ ত্রুটি, সচেতনতা এই বিচারকাজের আওতায় আসতে বাধ্য। যদিও খুব ঠেকায় না পড়লে সংবাদপত্র মোটেও সেদিকে যায় না। অবশ্য পাঠক হিসেবে আমরাও তা মেনে নিয়েছি। দীর্ঘদিনের চর্চায় পাঠক হয়তো ভাবে, সড়ক দুর্ঘটনার খবরে এর চেয়ে আর কী থাকবে!
এখন একটা প্রশ্ন উঠতে পারে—পাঠকরা সড়ক দুর্ঘটনার প্রতিবেদনের গভীরতা দেখতে চায় কি না? এ প্রশ্নের সর্বজনীন উত্তর দেওয়া মুশকিল। কিন্তু আমি পাঠক হিসেবে প্রয়োজন অনুভব করি না। আমার তরফ থেকে এটাই বাস্তবতা। আমি সড়ক দুর্ঘটনার খবর যতোটুকু পাই, ততোটুকুতেই তৃপ্ত। কিন্তু এ প্রশ্ন অন্তত জাগে, কেনো দুর্ঘটনায় নিহত কৃষক-শ্রমিকের স্ত্রী-সন্তানের ভবিষ্যৎ পরিণতি আমাকে ভাবায় না? কিংবা সড়কে আট-দশ জনের মৃত্যু আমার মধ্যে মর্মবেদনা তৈরি করে না? অন্যদিকে বিদ্যা সিনহা মীম কী খেতে পছন্দ করে, কী পরতে পছন্দ করে, কী রঙ তার ভালো লাগে—এসব খবর পড়তে আমার ভালো লাগে। এই ভালো লাগার কারণও হাতড়ে বেড়াই। কোনো কারণ খুঁজে না পেলেও শেষমেষ এটা বুঝতে পারি, ‘সঙ্গদোষে’ এসব খবরের প্রতি আমার ভালো লাগা তৈরি হয়েছে। বিষয়টা অনেকটা এ রকমআমার চারপাশ, বিশেষ করে গণমাধ্যমের সংস্পর্শ আমাকে যে সঙ্গ দেয়, তা অনেক কিছু ভুলিয়ে রাখে। এই ঘোর আমাকে প্রশ্ন করতে দেয় না। তার পরও এই সঙ্গ নিয়ে দাঁড় হই কৃষকের স্ত্রীর সামনে। দেখতে পাই, কৃষকের স্ত্রী-সন্তানের আহাজারি এবং এই সঙ্গদোষ আমার মধ্যে সবকিছু মেনে নেওয়ার মানসিকতা-সর্বস্ব একধরনের পর্দা ফেলে দিয়েছে। যে পর্দায় প্রতিফলিত হয়ে দুনিয়াজুড়ে এখন ‘‘সেলফি’র জয়গান চলছে—সেখানে কেবল আমি, আমি আর আমি।
‘মর্মান্তিক’ শব্দটা নিয়েও দু-চার কথা বলার আছে। সংবাদপত্রে এই শব্দটি বোধ হয় সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষেত্রেই সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। কিন্তু কেনো? অভিধানে শব্দটির বহুল-ব্যবহৃত অর্থ হলো ‘হৃদয়বিদারক’ কিংবা ‘‘মর্মভেদী’। সেই হিসেবে যেকোনো প্রাণহানির ঘটনাই তো ‘হৃদয়বিদার’। কিন্তু প্রাণ হারিয়েছে—এমন সবগুলো সড়ক দুর্ঘটনার খবরে এই ‘‘মর্মান্তিক’ শব্দটি পাওয়া যায় না! খেয়াল করলে দেখা যাবে, কোনো কোনো দুর্ঘটনার প্রতিবেদনের মোড়ক একটু বেশি চকচকে করার জন্য শব্দটি সচরাচর বেশি ব্যবহৃত হয়।
সড়ক দুর্ঘটনা : ফলোআপ ও সম্পাদকীয় পাঠ
আজ যা প্রকাশ হলো, আগামীকাল তা নিয়ে নতুন কিছু ছাপা হলে সেটাই ফলোআপ। মনে রাখা দরকার, এক্ষেত্রে কেবল একই বিষয় হলেই চলবে না। আগের দিনের প্রকাশিত খবরের সঙ্গে একটা পরম্পরা থাকতে হয়। ইংরেজিতে যাকে বলে আপডেট। ধরা যাক, বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে একটি খবর ছাপা হলো, যার শিরোনাম ‘আজ মুখোমুখি ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা’। পরের দিন ওই ম্যাচের ফলাফল কিংবা ম্যাচবিষয়ক কোনো তথ্য ওই প্রতিবেদনটির ফলোআপ হতে পারে। কিন্তু বিশ্বকাপবিষয়ক যেকোনো খবরই ফলোআপ নয়। এই বোঝাপড়ার ভিত্তিতে সড়ক দুর্ঘটনার সংবাদের ফলোআপ বলতে যা বোঝায়, তা সংবাদপত্রের পাতায় দেখা যায় না বললেই চলে। সংবাদপত্র ঘাঁটাঘাঁটি করে দেখেছি, কোনো দুর্ঘটনায় চার জনের মৃত্যুর খবর প্রকাশ হওয়ার পরদিন, সে বিষয়ে সাধারণত আর কোনো খবর প্রকাশ হয়নি। এমনকি ওই দুর্ঘটনায় নতুন করে কেউ মারা গেলেও নয়। সংবাদপত্রের কাছে এক-দুইটি প্রাণের তেমন কোনো ‘‘মূল্য’ নেই! বরং প্রেম ভাঙার পর বিরাট কোহলি ও আনুশকা শর্মাকে আবার কোনো পার্টিতে একসঙ্গে দেখা গেছে—সেটাই সংবাদপত্রের কাছে সবচেয়ে বড়ো ‘ফলোআপ’।
এখানে একটি বিষয় খেয়াল করার মতো। সড়ক দুর্ঘটনায় কোনো কৃষক, দিনমজুর কিংবা শ্রমিক মারা গেলে, আমরা পাঠকরা সাধারণত সেটাকে নিহত ও তার পরিবারের ‘ব্যক্তিগত’ দুর্ঘটনা বলে মনে করি। অর্থাৎ, ওই দুর্ঘটনার মধ্যে বাইরের কারো সম্পৃক্ত হওয়ার কোনো দরকার নেই। কিন্তু পুঁজিতান্ত্রিক এই সমাজব্যবস্থায় আনুশকা-বিরাট কোহলির ব্যক্তিগত সম্পর্ক হয়ে যায় ‘জাতীয় ও আন্তর্জাতিক’ ব্যাপার। তাতে নাক গলানো সবার জন্য জায়েজ। কিন্তু কেনো এমনটা হয়? যেটা মনে হয়, নিজের টিকে থাকার জন্য হুমকি, কিংবা নিজের সম্পর্কে প্রশ্ন ওঠে—এমন যেকোনো ঘটনাকে পুঁজিতন্ত্র ‘ব্যক্তিগত’ কোটায় ঠেলে দেয়। সেই হিসেবে সড়ক দুর্ঘটনার খবর সমাজব্যবস্থার কোনো ত্রুটি হিসেবে হাজির হয় না, তার কোনো ফলোআপ থাকে না কিংবা সেটা জাতীয় কোনো ব্যাপার হয় না।
এবার ‘সম্পাদকীয়’ নিয়ে কয়েক লাইন বলতে চাই। নমুনা হিসেবে আমি ২০১৫ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বর—এই তিন মাসের ‘‘প্রথম আলো’ ও ‘সমকাল’ উল্টে-পাল্টে দেখেছি। তাতে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে ‘প্রথম আলো’য় মাত্র একটি সম্পাদকীয় পাওয়া গেছে। ২০ নভেম্বর ২০১৫ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত ওই সম্পাদকীয়’র শিরোনাম ‘সড়কপথে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনুন, বাড়তি যানবাহন চালাচ্ছেন কারা?’ একই দিনে ‘সমকাল’-এ সম্পাদকীয়’র শিরোনাম ‘সড়কপথ নিরাপদ হবে কবে’। ‘সমকাল’-এ আরেকটি সম্পাদকীয় প্রকাশ হয় ২৩ অক্টোবর ২০১৫-তে; শিরোনাম ‘মহাসড়ক কি মৃত্যুফাঁদ হয়েই থাকবে?’ একই পত্রিকার ২৮ অক্টোবর ২০১৫’র সম্পাদকীয়’র শিরোনাম ছিলো—‘‘মিনিট্রাকে যাত্রী পরিবহন, মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবুন’।
এখানে ‘প্রথম আলো’র সম্পাদকীয়টি তুলে ধরতে চাই—
সড়কপথে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনুন
বাড়তি যানবাহন চালাচ্ছেন কারা?
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গত বুধবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তরকালে যানবাহনসংক্রান্ত যে তথ্য দিয়েছেন, তা আমাদের উদ্বিগ্ন না করে পারে না। তিনি বলেছেন, দেশে লাইসেন্সধারী গাড়িচালকের সংখ্যা ১৫ লাখ ৪৮ হাজার ৪৬৫। আর মোটরযানের সংখ্যা ২৪ লাখ ৪ হাজার ১১৪। সেই হিসাব মতে, দেশে নিবন্ধিত মোটরযানের তুলনায় বৈধ চালক প্রায় ১৪ লাখ কম।
স্বভাবতই প্রশ্ন আসে, বৈধ চালকহীন এসব যানবাহন কারা চালাচ্ছেন? নিশ্চয়ই ভূতে চালাচ্ছে না কিংবা চালকবিহীন যান চলাচল করার মতো প্রযুক্তিও বাংলাদেশে আসেনি। অতএব, ধরে নেওয়া যায়, অদক্ষ, অপটু ও অপ্রশিক্ষিত চালকেরা এসব যানবাহন চালাচ্ছেন, যাঁদের বৈধ লাইসেন্স নেই। তাঁরা হয়তো সড়কের ধারে থাকা, নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের ভাষায়, ‘গরু-ছাগল’ চেনেন, কিন্তু গাড়ি চালানোর কৌশল রপ্ত করেননি। যে দেশে সামান্য প্রশিক্ষণ নিয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া যায়, সে দেশে লাইসেন্স ছাড়া চালকদের মান অনুমান করা কঠিন নয়। অনেক কারণে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটলেও অদক্ষ ও অপ্রশিক্ষিত চালক যে এর প্রধান কারণ, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই।
প্রথমে মন্ত্রী মহোদয় ও বিআরটিএকে নিশ্চিত করতে হবে, লাইসেন্স ছাড়া কিংবা ভুয়া লাইসেন্স নিয়ে কেউ সড়কে যানবাহন নামাতে পারবেন না। দ্বিতীয়ত, কেউ আইন অমান্য করে যানবাহন নামালে তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে চালককে কিছু জরিমানা করে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু যে পরিবহনমালিক কম মজুরি দিয়ে অননুমোদিত চালককে সড়কে নামান, তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। কেউ আইন ভঙ্গ করলে যদি শাস্তিই না পায়, তাহলে আইন মানবে কেন?
যাত্রীসাধারণ বটেই, চালকদের নিরাপত্তার জন্যও ভুয়া লাইসেন্সধারী কিংবা লাইসেন্সহীন কোনো চালকের সড়কে নামা পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে। এতে পরিবহন খাতে যেমন শৃঙ্খলা ফিরে আসবে, তেমনি সড়কপথে দুর্ঘটনার হারও কমবে।
বিষয়টি পড়ে মনে হলো—লিখতে হবে তাই লেখা। সংবাদপত্র অফিস সম্পর্কে যাদের ধারণা আছে, তারা জানেন, প্রতিদিনই এক বা একাধিক সম্পাদকীয় লিখতে হয়। সাধারণত সাম্প্রতিক কিংবা পত্রিকার ভাষায় ‘গতকাল’-এর কোনো ঘটনা নিয়েই ওই সংবাদপত্রের মতামত-অবস্থান সম্পাদকীয় লেখা হয়। সম্পাদকীয়টিতে ‘‘প্রথম আলো’র পরামর্শ হলো, ‘শাস্তি দিতে হবে’।‘‘প্রথম আলো’ বলছে, ‘কেউ আইন ভঙ্গ করলে যদি শাস্তিই না পায়, তাহলে আইন মানবে কেনো? তার মানে, পৃথিবীতে মানুষ অপরাধ থেকে দূরে থাকে শাস্তির ভয়ে। অপরাধ দমনে শাস্তি কি সমাধান? অনেক সময় অনেক ঘটনারই তো শাস্তি হয়। তো সেসব অপরাধ কি বন্ধ হয়ে গেছে? কিছু মানুষ শাস্তির ভয়ে বড়োজোর নিজের প্রবৃত্তিকে সংযত রাখে। কিন্তু এতে তার প্রবৃত্তি বিলুপ্ত হয় না। পৃথিবীতে আইনের সাধ্য নেই প্রবৃত্তি বিলুপ্ত করার।’
পরিশেষ
এই পর্যায়ে দুটি সংবাদ পর পর তুলে ধরেই লেখাটি শেষ করতে চাই। এর মধ্যে প্রথমটি সড়ক দুর্ঘটনার; পরেরটি বজ্রপাতের। তাতে এই লেখার শিরোনামটির ব্যাখ্যা পাওয়া যাবে। প্রথমটি ‘‘প্রথম আলো’য় ২০১৫ খ্রিস্টাব্দের ২০ নভেম্বর প্রকাশিত—
সড়ক দুর্ঘটনায়
একই পরিবারের
তিনজনের মৃত্যু
মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলায় বাস ও মাইক্রোবাসের সংঘর্ষে একই পরিবারের তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন মাইক্রোবাসের চালক ও ওই পরিবারের গৃহ পরিচারিকা। আজ রোববার দুপুরে উপজেলার ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের কেষ্টখালী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর ক্ষুব্ধ জনতা প্রায় এক ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ করেন।
নিহতরা হলেন, আজহার মৃধা (৫৭), তাঁর স্ত্রী সুফিয়া বেগম (৫০) এবং আজহারের বোন রহিমা বেগম (৫০)। আহত দুজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নিহত ও আহতরা সবাই মাইক্রোবাসে ছিলেন।
পুলিশ জানায়, আজ দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা থেকে মাওয়াগামী স্বাধীন পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে বিপরীত দিক থেকে আসা মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে মাইক্রোবাসটি দুমড়ে মুচড়ে গিয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান সুফিয়া। গুরুতর আহত অবস্থায় আজহার ও তাঁর বোন রহিমাকে শ্রীনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁদের মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার পর ক্ষুব্ধ জনতা মহাসড়ক অবরোধ করেন। এতে মহাসড়কের দুপাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে বেলা একটার দিকে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে।
শ্রীনগর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) সামছুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, বাসটিকে আটক করা হয়েছে। তবে চালক পালিয়ে গেছেন। এ ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
এবার ‘‘প্রথম আলো’তেই ২৮ এপ্রিল ২০১৬ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত একটি বজ্রপাতের খবর
বজ্রপাতে দুই ভাইসহ নিহত ৩
হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার গুঙ্গিয়াজুড়ি হাওরে এবং বানিয়াচং উপজেলার কামালখানিতে আজ সোমবার বজ্রপাতে দুই ভাইসহ তিনজন প্রাণ হারিয়েছেন।
নিহত ব্যক্তিরা হলেন নবীগঞ্জ উপজেলার কালিয়ারভাঙ্গা দেবপাড়া গ্রামের বুদ্ধি মিয়ার দুই ছেলে আবদুল আলী (৪৫) ও ওয়ালি মিয়া (৪০) এবং কামালখানি গ্রামের মুছা উল্লাহর ছেলে জুয়েল মিয়া (১৮)।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, আজ সকালে আবদুল আলী ও ওয়ালি মিয়া নিজেদের জমির ধান কাটতে শ্রমিক নিয়ে গুঙ্গিয়াজুড়ি হাওরে যান। সেখানে ধান কাটার কাজ শেষে করে বিকেল পাঁচটার দিকে একটি নৌকাবোঝাই ধান নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন তাঁরা। এ সময় প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছিল। তাঁদের নৌকাটি গুঙ্গিয়াজুড়ি হাওরের কড়িয়াখালে পৌঁছালে বজ্রপাতে দুই ভাই মারা যান। এ ঘটনার আহত হন ধান কাটার শ্রমিক রুবেল মিয়া (২৫)। তাঁকে হবিগঞ্জ সদর জেলা আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল বাতেন দুই ভাইয়ের মৃত্যুর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
একই দিন বেলা তিনটার দিকে জেলার বানিয়াচং উপজেলার কামালখানির এলাকায় বজ্রপাতে প্রাণ হারিয়েছেন ট্রলিচালক জুয়েল। হাওর থেকে কাটা ধান তিনি ট্রলিতে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। বেলা তিনটার দিকে বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছালে বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান তিনি।
বানিয়াচং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অমূল্য কুমার চৌধুরী এ দুর্ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
লেখক : সোহেল রানা, বর্তমানে দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় সহ-সম্পাদক হিসেবে কর্মরত।
sohelmc@gmail.com
তথ্যসূত্র
১. করিম, সরদার ফজলুল (২০০৬ : ১১২); দর্শন কোষ; প্যাপিরাস, ঢাকা।
২. প্রাগুক্ত; করিম, সরদার ফজলুল (২০০৬ : ১১২)।
৩. রনো, হায়দার আকবর খান (২০০৮ : ৬৫); মার্কসবাদের প্রথম পাঠ; গণপ্রকাশন, ঢাকা।
এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন