Magic Lanthon

               

প্রকাশিত ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১২:০০ মিনিট

অন্যকে জানাতে পারেন:

‘আমি ভালো সিনেমা বানাতে পারছি না, অথচ বলছি ওগুলো অপসংস্কৃতি—এগুলো চরম হিপোক্রেসি’


২০১৫ খ্রিস্টাব্দের একুশে গ্রন্থমেলায় ঘোরার ফাঁকে বন্ধু জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে ছবিরহাটে বসে আড্ডা দিতে দিতে হঠাৎ-ই চিন্তাটা মাথায় আসে; ঢাকায় বসবাস করা চলচ্চিত্রপাগল যুবা বন্ধুদের নিয়ে একটা ম্যাজিক আড্ডা আয়োজন করলে কেমন হয়? যেই চিন্তা সেই কাজ, বন্ধু-ছোটোভাই রাজীব আহ্সানকে ফোনতার আবার এসব বিষয়ে ভালো আগ্রহ, তাই ফোন পেয়ে সে রাজি হতে সময় নিলো না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে টেলিভিশন ও ফিল্ম স্টাডিজ বিভাগে মাস্টার্স পড়ুয়া রাজীব জিজ্ঞেস করলো, আর কে কে থাকবে? বললাম, তোমরা একটা চলচ্চিত্র করছিলে না, তুমি তো তার নির্বাহী প্রযোজকতাহলে পরিচালক মোহাম্মদ আলী পারভেজও থাক। পারভেজ আমাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু, তারা কয়েকজন মিলে প্রিয়তমা তুমি দাঁড়ি আমি কমা নামে চলচ্চিত্রটি শুরু করেছিলো, শেষ করতে পারেনি। তার অভিজ্ঞতা জানতে মন চায়।

এর বাইরে বাংলাদেশ স্বাধীন চলচ্চিত্র আন্দোলন-এর কর্মী সালমান ফারসী থাকবেন; চলচ্চিত্রের বর্তমান অবস্থা ও তা নিয়ে তাদের সংগঠনের চিন্তা জানতেই তাকে রাখার আগ্রহ। এছাড়া চলচ্চিত্রের ভালো দর্শক, চিত্রশিল্পী আইয়ুব আল আমিন থাকলে ভালো হয়প্রেক্ষাগৃহে হাজির থেকে দীর্ঘদিন ধরে বাংলা চলচ্চিত্র দেখার অভিজ্ঞতা আছে তার; সঙ্গে সাংবাদিক ও ম্যাজিক লণ্ঠন-এর সহযোগী সম্পাদক আসাদ লাবলু, সহকারী সম্পাদক মাজিদ মিঠু তো আছেই। তবে সঞ্চালকের দায়িত্বটা দিতে চাইলাম বন্ধু-সাংবাদিক জাহাঙ্গীর আলমকেই। সে রাজিও হয়। সিদ্ধান্ত হয়, সোহরাওয়ার্দীর খোলা মাঠে কোনো এক বিকেলে আড্ডা জমবে। এভাবেই চিন্তার শুরু।

এর বাস্তবায়ন হয় একই বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর। সেদিনের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বিকালের আবহওয়াটা একটু গরমই ছিলো, কিন্তু হঠাৎ করেই ঠাণ্ডা বাতাস বইতে শুরু করলো। প্রথমে ভালো লাগলেও পরে ভয় হলো বৃষ্টি নামবে এই ভেবে। তার পরও শিখা অনির্বাণের পাশে আমরা আড্ডায় বসলাম ঠিক সাড়ে চারটায়। আড্ডা শুরুর মিনিট পাঁচেকের মধ্যে বৃষ্টির শুরু। প্রথমে ভেবেছিলাম হয়তো থেমে যাবে। কিন্তু তা ধীরে ধীরে বাড়তেই থাকলো; আর সঙ্গে বাড়তে থাকে আমাদের আড্ডার পরিধিও। তাই গাছতলার সামান্য আশ্রয়ে কাকভেজা হয়েই টানা ঘণ্টাখানেক চললো তুমুল আড্ডা। চলতি সংখ্যায় আড্ডার শেষ কিস্তি প্রকাশ করা হলো। [সম্পাদক]

 

শেষ কিস্তি

জাহাঙ্গীর আলম : এখন তো হলিউড-বলিউডে সিনেমার প্রোমোশনের জন্য অভিনেতা-অভিনেত্রীদের অনেক সময় দিতে হয়।

মোহাম্মদ আলী পারভেজ : সবার সঙ্গে চুক্তিই থাকে শুটিং, ডাবিং ও প্রচারণার জন্য সময় দিতে হবে। এজন্য তারা একধরনের বাধ্য থাকে।

জাহাঙ্গীর : সিনেমার ব্যবসা ভালো হচ্ছে না। সিনেমাহল থেকে টাকা উঠছে না, একে একে সেগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আবার হঠাৎ করে কোনো ভালো সিনেমা তৈরি হচ্ছে, কিন্তু সিনেমাহল পাওয়া যাচ্ছে না।

রাজীব আহ্সান : ভালো সিনেমা তৈরি হয়েছে, কিন্তু সিনেমাহলে দেখানো সম্ভব হয়নিএর সঙ্গে আমি দ্বিমত পোষণ করছি। আমাদের মেধার অভাব। আমরা ভালো সিনেমা বানাতে পারতেছি না। দ্যাটস হোয়াই, দর্শক সিনেমাহলে যাচ্ছে না।

আসাদ লাবলু : ভালো-মন্দ নিয়ে একটা সমস্যা আছে। আমি তো একজনকে বলছি, তুমি হীরক রাজার দেশে সিনেমাটি দেখো, অযান্ত্রিক দেখোতাকে বোঝাচ্ছিঅথচ সে কিন্তু ফিল-ই করে না। এখন আপনি চিল্লাচ্ছেন এটা ভালো সিনেমাঅনন্ত জলিলের ওইটা কিছুই নাএইটা বোঝাবেন কীভাবে?

সালমান ফারসী : এটা কীভাবে বোঝাবেন। এটা বুঝলে তো সবাই ঋত্বিক কুমার ঘটক হয়ে যেতো!

আসাদ : আপনি তো চান আপনার মুভিটা সবাই দেখুক।

সালমান : হ্যাঁ, চাই; সবাই দেখুক।  তবে তা সবাইকে বুঝতে হবেবিষয়টা এমনও না।

আসাদ : এই চাওয়ার ক্ষেত্রে এটা তো একটা বড়ো প্রতিবন্ধকতা।

সালমান : ধরেন, কমিউনিস্ট ম্যানুফেস্টো হচ্ছে ধর্মগ্রন্থের পর সবচেয়ে পঠিত পুস্তক। মার্কসের লিটারেচার পড়ে মানুষ প্রাণ দিচ্ছে। কিন্তু যাদের জন্য লেখা হয়েছেসেই সর্বহারারা এটা কি সহজে বুঝবে? সেটার বিস্তার, বিন্যাস অনেক ভিতরের বিষয়। অযান্ত্রিক, পথের পাঁচালী বুঝতে গেলে তো আপনাকে সময় ও শ্রম দিতে হবে। এটা কেউ দুম করে বুঝবেএটা আশা করা যায় না।

আসাদ : তার মানে আমাদের শিকড়েও অনেক ঝামেলা আছে।

সালমান : ফিল্ম সোসাইটি অ্যাক্টিভিস্টরা যেটা করেসিনেমার দর্শক তৈরি করে। দর্শক হয়তো বেশি তৈরি হয় না, তবে তারা স্ট্রংলি সিনেমার পার্ট হয়ে ওঠে।

জাহাঙ্গীর : আমরা ভালো সিনেমা তৈরি করতে পারছি না। সিনেমাহল রক্ষার কথা বলে ভারত থেকে সিনেমা আমদানির চেষ্টা হয়েছে। সেটা কি কাজে এসেছে?

রাজীব : এটা মোটেও কাজে আসেনি। কারণ সব পুরনো সিনেমা আমদানি করা হয়েছে, যেগুলো বাংলাদেশের দর্শক আগেই দেখে ফেলেছে। ফলে এগুলো দেখার জন্য সিনেমাহলে দর্শক যাওয়ার কোনো কারণ নেই। নতুন সিনেমা রিলিজ দিলে হয়তো ভালোই চলবে। আমাদের এখানে প্রচুর দর্শক। তবে আমি ভারত থেকে সিনেমা আনার পক্ষে নই।

জাহাঙ্গীর : কারণ কী?

রাজীব : নিজেদের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি বিকাশে এটা বাধা হয়ে দাঁড়াবে। তবে সীমিত পর্যায়ে সিনেমা আনা যায়। কারণ আমি কালচারকে বেঁধে রাখার পক্ষে নই। নীতিমালার ভিত্তিতে সারা পৃথিবীতেই এটা হয়ে থাকে।

জাহাঙ্গীর : সিনেমাহল রক্ষায় সরকার কী ধরনের ভূমিকা রাখতে পারে? ভারত বা অন্য দেশের ক্ষেত্রে পরিস্থিতিটা কেমন একটু বলতো রাজীব?

রাজীব : রিসেন্টলি সরকার এ বিষয়ে সহায়তা করার চেষ্টা করছে। তবে শুধু সরকারকে দোষ দিলেই হবে না। মাল্টিপ্লেক্স করার জন্য স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়া হচ্ছে। সেদিন মন্ত্রী এক অনুষ্ঠানে জানালো, কেউ নাকি ঋণ নিচ্ছে না।

জাহাঙ্গীর : সরকার তো এ রকম অনেক সুযোগ-সুবিধার কথাই বলে, কিন্তু বাস্তবে তো অনেক জটিলতা থাকে।

রাজীব : রাষ্ট্রীয় প্রতিবন্ধকতা আছে। তবে সিনেমাহল যে তৈরি হচ্ছে না, তা নয়। ১০১৫টি মাল্টিপ্লেক্সের কাজ চলতেছে। এগুলো চালু হলে পরিস্থিতি ঘুরবে।

আইয়ুব : ঋণ নিচ্ছে না, মানে তারা হতাশ। কারণ মাল্টিপ্লেক্স বানিয়ে কী করবে?

রাজীব : আমি মনে করি সিনেমা দর্শকের ব্যাপার। সিনেমাকে অবশ্যই কমিউনিকেট করতে হবে পাবলিকের সঙ্গে। একটা ফেস্টিভালে অংশ নেওয়ার চেয়ে দেশের জনগণ সেই সিনেমা দেখলো কি না তা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

আসাদ : উনি (সালমান ফারসী) চলে যাবেন তো, উনার কাছে আমার একটা প্রশ্ন আছে। চলচ্চিত্রের উন্নয়নে অ্যাক্টিভিজম ছাড়া বিকল্প আর কিছু কি আছে?

সালমান : না, কোনো বিকল্প নেই, অ্যাক্টিভিস্ট লাগবে। সে দর্শকের কাছে সিনেমাকে নিয়ে যাবে। সিনেমা সম্পর্কে নিজের জ্ঞান বাড়াবে এবং এর মধ্য দিয়ে সে ফিল্মমেকার হয়ে উঠবে।

আসাদ : অ্যাক্টিভিস্ট তৈরি হচ্ছে না ...।

সালমান : এখানে প্রক্রিয়ার মধ্যে সমস্যা রয়েছে। সেটা খুঁজে দেখতে হবে। খসরু ভাইয়েরা এখানে কাজ করেছেন। তার ধারাবাহিকতায় আমরা কিছু ফিল্ম টিচার পেয়েছি। কিছু ভালো ফিল্ম পেয়েছি। এখন যেমন ম্যাজিক লণ্ঠন কাজ করতেছে। তাদের নতুন করে ভাবতে হবেকীভাবে আরো অ্যাক্টিভিস্ট তৈরি করা যায়। যেসব ফিল্ম সোসাইটি আছে তাদের আরো অ্যাক্টিভ হতে হবে। নতুনদের আগ্রহী করে তুলতে হবে। ইউনিভার্সিটিগুলোতে যেতে হবে। এর বিভিন্ন প্রক্রিয়া রয়েছে। অযান্ত্রিক দুইশো লোক দেখলো নাকি ২০টা লোক দেখলো, সেটা বড়ো বিষয় না। যদি অযান্ত্রিক-এর মতো সিনেমা তৈরি হয়, যদি অ্যাক্টিভিজম থাকে, যদি মুভমেন্ট থাকে, তাহলে এমনিই বিকল্প পথ খুঁজে পাওয়া যাবে।

আসাদ : রাষ্ট্র যদি সহায়তা না করে তাহলেও কি সম্ভব?

সালমান : সম্ভব। আপনি পিপলসের কাছে যাবেন। তাদের বোঝাবেন। আপনি ডিফারেন্ট ওয়েতে যাবেন, কাউন্টার চিন্তা করবেন। ইন্ডাস্ট্রি যখন আপনাকে সিনেমা বানাতে দেবে না, সেন্সরে ছাড় দেবে নাতখন কি সিনেমা তৈরি হয় না? আমরা লাতিন সিনেমার দিকে তাকালে কী দেখি, জাফর পানাহির সিনেমার দিকে তাকালে কী দেখতে পাই? মানুষ সিনেমা বানাচ্ছে। এখন সেই সিনেমা কীভাবে ডিস্ট্রিবিউট হবে, কতোটুকু লেন্থ হলো, ভালো লাগলো কি নাসেটা অন্য বিষয়। ইন্ডাস্ট্রির কাউন্টারে সিনেমা হয়েছে, হচ্ছে, হবে। বাংলাদেশের বাস্তবতা হচ্ছেফিল্মমেকারদের নিজেদের অ্যাক্টিভিস্ট হয়ে উঠতে হচ্ছে। কারণ তাদের ওই রকম কোনো ফিল্ম সোসাইটি নেই। কোনো সংগঠন তাদের হেলপ করছে না।

জাহিদ জন : গত ৪০ বছরে বাংলাদেশের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি দাঁড়ালো না দায় তো কেবল রাষ্ট্রের নয় ...।

সালমান : কাটপিস যারা করছে, তারা রাষ্ট্রের পেট্রোনাইজ করছে। ছোটো একটা উদাহরণ দিই, আপনি যখন এখানে অনুদানের জন্য যাবেন, যখন সেন্সরে যাবেন, রাষ্ট্রের বিভিন্ন লেয়ার ফেস করবেন, তখন বুঝতে পারবেন রাষ্ট্র আসলে কতোখানি ভালো সিনেমার পক্ষে। আপনি যদি মুহাম্মদ খসরুর ‘বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলন বইটা পড়েন, তার মধ্যে এসব সমস্যার কথা খুঁজে পাবেন। কোন কোন সমস্যার কারণে ফিল্ম সোসাইটি মুভমেন্ট সঠিক পথ খুঁজে পায় নাইসেটা বুঝতে পারবেন।

রাজীব : খসরু ভাই আমাদের অনেক শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি। তারাও অনুদানের সিনেমার জন্য চেষ্টা করেছে, রাষ্ট্রের সুবিধা নিতে চাইছে। যদিও রাষ্ট্র তা দেয়নি, তাদের যোগ্যতা মূল্যায়ন করেনি। এ কথা কিন্তু আমাদের স্মরণ রাখতে হবে।

সালমান : আমি তাহলে বিদায় নিই।

রাজীব : আপনার সঙ্গে তো কেবল ডিবেট জমছিলো।

সালমান : আবার হবে। (এক আত্মীয় হাসপাতালে ভর্তি থাকায় সালমান ফারসীকে আড্ডা শেষ না করেই চলে যেতে হয়)

জাহাঙ্গীর : রাজীব তো বললো, বাংলাদেশে ভালো কিছু হচ্ছে না। এখন তরুণ পরিচালকরা এ পরিস্থিতি থেকে কীভাবে বের হয়ে আসবে?

পারভেজ : তরুণদের সিনেমা বানানোর স্ট্রাগল সারা পৃথিবীতেই আছে। অন্য জায়গায় একটা সিস্টেমেটিক ওয়েতে হয়। আমাদের এখানে তো সব এলোমেলো। এখানে কাউকে স্ক্রিপ্ট দেখানোর সুযোগই নেই। তবে এখন ইন্টারন্যাশনালি কিছু ফান্ডিংয়ের জায়গা আছে। সেখানে স্ক্রিপ্ট সাবমিট করলে, তাদের পছন্দ হলে মিনিমাম একটা ফান্ড দেয়। ওইভাবে আমাদের এখানে কিছু সিনেমা তৈরি হয়েছে, হচ্ছে। কিন্তু এটা খুবই কম।

জাহাঙ্গীর : ইমপ্রেস টেলিফিল্ম ও বেঙ্গল ফাউন্ডেশন তো সিনেমা প্রযোজনা করছে।

পারভেজ : নতুন পুরনো অনেকেই সেখানে সুযোগ পাচ্ছে।

আসাদ : রাষ্ট্র কখন সিনেমা আটকায়, যখন তার হিসাব-নিকাশের সঙ্গে মেলে না। কিন্তু শিল্পের অনেক বিষয় বা সামাজিক অনেক সমস্যা রয়েছে, যেগুলো সরকার আটকায় না। যেমন বাল্যবিবাহের সমস্যা নিয়ে সিনেমা হতে পারে।

রাজীব : প্রতীকীভাবেও অনেক বিষয় উপস্থাপন করা যায়। এমনও হয়েছে সিনেমা বানানোর অনেকদিন পর ইরানের সরকার তা নিষিদ্ধ করেছে। সেখানকার নির্মাতাদের দক্ষতা রয়েছে। আমাদের নিজেদের মেধার প্রচণ্ড অভাব। তবে আমরা তার দায় চাপাচ্ছি অ্যাক্টিভিস্টদের ওপর। জহির রায়হানকেও রাষ্ট্রের সঙ্গে স্ট্রাগল করে সিনেমা বানাতে হয়েছে।

জাহাঙ্গীর : অনেক সিনেমা টেলিভিশনে মুক্তি পাচ্ছে, সিনেমাহলে দেখানো হচ্ছে না। এটা ইন্ডাস্ট্রির উন্নয়নে কতোটুকু  ভূমিকা রাখবেআমি তো এ নিয়ে বেশ চিন্তিত।

রাজীব : এটা আসলে ইন্ডাস্ট্রির উন্নয়নে কোনো ভূমিকাই রাখছে না। এগুলোকে আমি ফিল্ম মনে করি না। এ কথার সূত্র ধরে বলি, আমরা কেনো ফিল্ম বানাতে পারছি না? সর্বশেষ যে সিনেমা দেখলামঅনিমেষ আইচের জিরো ডিগ্রি। অনেক আশা নিয়ে সিনেমাহলে গিয়েছিলাম। মনে করেছিলাম, দেখার পর অন্তত সিনেমাটা নিয়ে তিন দিন ভাববো। আমার পারসোনাল অপিনিয়ন— ঠিক কি না জানি নাবাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে টেলিভিশনের নাটক ও বিজ্ঞাপন নির্মাতা দিয়ে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির কোনো উন্নতি হবে না। তাদের দিয়ে ভালো ফিল্ম বানানো সম্ভব নয়। যদিও আমরা অপেক্ষায় আছি অমিতাভ রেজার সিনেমাটি (আয়নাবাজি) দেখার জন্য।

জাহাঙ্গীর : ফিল্মের কাজ বন্ধ হওয়ার পর, পারভেজ ভাই টেলিভিশনের জন্য কাজ করেছেন। রাজীবের এ মতামত সম্পর্কে কি আপনি একমত?

পারভেজ : আমি এখনো ফিল্ম নিয়েই আছি। স্ক্রিপ্টের কাজ করছি। প্র্যাকটিসের মধ্যে আছি। আমার লক্ষ্য চলচ্চিত্র।

রাজীব : আমার মনে হয় এ ধরনের প্র্যাকটিস ফিল্মমেকারদের ক্ষতি করে দিচ্ছে। তার পরও দেখা যাক কী হয়। অনিমেষ বা আরো অনেকের সিনেমা দেখে মনে হয়েছেটেলিভিশন তাদের ওপর জেঁকে বসেছে।

জাহাঙ্গীর : মোস্তফা সরওয়ার ফারুকীর সিনেমা?

রাজীব : তার সিনেমাও অনেকটা টেলিভিশন ঘেঁষা। তার পরও তার সিনেমায় ফিল্মিক মোমেন্ট তৈরি হয়এটা প্রশংসার দাবিদার। তার সিনেমা দেখে বলতে পারা যায়, এটা ফারুকীর। সে একটা নিজস্ব ল্যাঙ্গুয়েজ তৈরি করেছে।

আইয়ুব আল আমিন : মফস্বলের দিকে তো এ সিনেমা যায়নি। অথচ এদিকে হইহই রইরই উঠে গেছে।

রাজীব : এ কারণে বিভিন্ন টাইপের সিনেমা তৈরি হয়। একটা পিচ্চি কার্টুন দেখবে, এটাই স্বাভাবিক। তাকে যদি আমি অযান্ত্রিক বোঝাতে যাই, তাহলে তো হবে না। তার তো বয়সই হয়নি। বয়সের কারণে যেমন হয়, তেমনই ইনটেলেকচ্যুয়ালিটিরও তারতম্য থাকে। সুতরাং বিভিন্ন টাইপের সিনেমা হতে হবে। কোনো সিনেমাকে আসলে খারাপ বলা যায় না। কাজটা সে ভালোভাবে করতে পারলো কি না সেটা গুরুত্বপূর্ণ। একটা থ্রিলার ছবি দেখলাম, সেখানে থ্রিল আছে কি না, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।

পারভেজ : সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ ম্যাচিউরড হয়। তার দেখার দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যায়। কেউ হয়তো ১০ বছর আগে সালমান শাহ-মৌসুমীর সিনেমা দেখতো। এখন সে অযান্ত্রিক দেখে।

রাজীব : এখানকার ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফিল্ম ও তার নির্মাতাদের সঙ্গে আমার দীর্ঘদিনের পরিচয়, ১৫২০ বছর ধরে তাদের দেখছি। প্রতিটি লোককে আমি দেখেছি, আমি নাম ধরে বলতে পারি, কিন্তু বলছি না। আমি আজকে অনুদানের জন্য সিনেমা জমা দিলাম, পেলাম না; সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিরাট বিদ্রোহী হয়ে গেলাম। আমিও তো অনুদানের জন্য স্ক্রিপ্ট জমা দিয়েছি, পাইনি। কিন্তু আমি তো কিছু বলছি না। সবসময় জাজমেন্ট ঠিক হয় না। অনেক ভালো সিনেমার জন্যও সরকার অনুদান দিয়েছে। আবার অনেকে লবিং করেও পেয়েছে। অনেকে অনুদান পেয়ে সিনেমাই বানায়নিটাকা মেরে চলে গেছে।

আইয়ুব : যারা ইন্ডিপেন্ডেন্ট সিনেমা বানায়, সিনেমাহলের বাইরে তাদের সিনেমা দেখানোর একটা টেন্ডেন্সি থাকে। সিনেমাহল যে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, সে বিষয়ে তারা কোনো মাথা ঘামায় না।

রাজীব : সালমান ভাইয়ের কথা অনুসারে তারা তো সিনেমাহলে সিনেমা দেখাতে চায় না। এ বিষয়ে নির্মাতার কোনো দায়ই নাই।

আইয়ুব : কোনটা আর্ট আর কোনটা আর্ট না, সে বিষয়েও বিতর্ক আছে। একজনের কাছে একটি বিষয় আর্ট হলেও, অন্য জনের কাছে তা নাও হতে পারে।

মাজিদ মিঠু : চলচ্চিত্র একই সঙ্গে যেমন আর্টের কথা বলে, তেমনই একটা ব্যবসাও। যারা চলচ্চিত্র নির্মাণ করছে বা এর প্রদর্শনের সঙ্গে জড়িত তারা কিন্তু দুইটি দিকই দেখেন। চলচ্চিত্রে যেমন ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য থাকে, তেমনই এটা আর্ট হয়ে ওঠে, কিংবা শিল্পীর উদ্দিষ্ট মনোভাব থাকে। এই মেসেজটা দিতে চায় বা মেসেজ না থাকলেও তার একটা সৃষ্টি থাকে। কিন্তু এটা দর্শকের কাছে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে পরিচালকের দায় কতোটুকু? সালমান ভাই দায়টা এড়িয়ে গেছেন। আর্ট ফিল্ম কম সংখ্যক দর্শক দেখছে। বাণিজ্যিক ধারার সিনেমা কোনোরকমে চলছেসিনেমাহলগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে করণীয় কী?

রাজীব : পুরো না হলেও নির্মাতার দায় অনেকাংশে। একসময় সিনেমাহলে সিনেমা চলতো। ৬০-এর দশকের সিনেমার নামগুলো দেখেন, আর এখনকার নামগুলো দেখেন। দর্শককে দেখানোর জন্য অবশ্যই নির্মাতার দায় আছে।

মিঠু : সিনেমার টার্গেট অডিয়েন্স থাকে। তাদের মন মতো বানাতে হয়।

রাজীব : মন মতো না হোকআমিও অডিয়েন্সের মন ঘুরিয়ে ফেলতে পারি। তাকে সিনেমা দেখতে বাধ্য করতে পারি ওই রকম জিনিস ক্রিয়েট করতে পারি। দর্শকের রুচির সঙ্গে তাল মেলাতে হবে, এমন না। আমার রুচির সঙ্গেও দর্শক তাল মেলাতে পারে। সেই ক্ষমতা আমার থাকতে হবে, তা না হলে আমি কপি করবো। দর্শক তামিল-তেলেগু মারদাঙ্গা সিনেমা পছন্দ করতেছে, আমি ওই জিনিসই বানাচ্ছি। সেটা কিছুদিন চললো, তার পর চললো না।

আইয়ুব : আমার মতে, সিনেমা দেখানোর দায় একমাত্র পরিচালকেরই। কারণ কীপিকে কিন্তু কেউ আমাকে দেখতে বলেনি। আমি নিজেই দেখছি।

রাজীব : ওই রকম ক্ষমতা যদি কারো না থাকে, তার সিনেমা বানানো উচিতই না। আমি একা সিনেমা বানাবো, আর একা একা দেখবো। সিনেমা একা দেখার বিষয় না। কবিতাও একা একা উপভোগের বিষয় না। কবিতা পড়ে আমরা আলোড়িত হই। নেরুদার কবিতা এতো লোকে পড়তো। শামসুর রাহমান, আল মাহমুদ, নির্মলেন্দু গুণের কবিতা যদি আমরা না পড়তাম, আমাদের ভালো না লাগতো, তাহলে তারা কবি হয়েই উঠতো না।

পারভেজ : ডিরেক্টর অবশ্যই মেইন পারসন। তবে ডিরেক্টর চাইলেই সবকিছু করতে পারবে না। এটার সঙ্গে অনেক বিষয় জড়িত। ভালো প্রযোজকও দরকার।

জাহাঙ্গীর : ক্রমেই সিনেমাহলের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। চলচ্চিত্র-নির্মাণও কম হচ্ছে। এ অবস্থায় কেউ প্রচলিত ফর্মুলার বাইরে চলচ্চিত্র নির্মাণ করলোসে কীভাবে সারাদেশের দর্শকের কাছে যাবে?

পারভেজ : এখন অনেক উপায় আছে। একটা ভালো সিনেমা বানালে, সেটি ক্লিক করার অনেক পথ তৈরি হয়ে গেছে। প্রথমে সিনেমাটাকে আপনি কয়েকটি ফিল্ম ফেস্টিভালে পাঠান। এটা মূলত মূলধারার বাইরের চলচ্চিত্রের জন্য প্রযোজ্য। তবে ফর্মুলাভিত্তিক সিনেমার জন্য সিনেমাহল তো পাওয়া যাবে।

রাজীব : এখানে একটা কথা বলা হয়ডিস্ট্রিবিউশনের অমুক চেইন সিনেমাটা আটকে রাখছেএটা সম্পূর্ণ ভুয়া কথা। যারা এগুলো বলে, তারা আসলে মেইনস্ট্রিমের ডিস্ট্রিবিউশনে যায়নি। যেকোনো দিন কাকরাইলে যায় নাই, সে কমারশিয়াল ফিল্ম বানাতে চাচ্ছে!

পারভেজ : আমার কথা এখনো শেষ হয়নি। সিনেমাটা ১৫­২০টি ফিল্ম ফেস্টিভালে পাঠান। যদি দুইচারটাতে ক্লিক করে, দেশে নিউজ হবে। এভাবে প্রাথমিক প্রচার হবে সিনেমাটার। তখন আপনি নিশ্চিত সিনেমাহল পাবেন।

রাজীব : স্টার সিনেপ্লেক্সের মতো অনেকগুলো সিনেমাহল থাকলে, তারেক ভাই কিংবা মোরশেদ ভাইয়ের সিনেমা কিন্তু টাকা ওঠাতে পারতো। আমাদের এখানে মাল্টিপ্লেক্সের অভাব, সিনেমাহল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এটার দায় কেবল এফ ডি সি’র মানুষদের নয়। তারা ভালো সিনেমা বানাতে পারে নাই, এটা ঠিক। কিন্তু যারা এফ ডি সি’র বাইরে, আমরা কী করলাম? এই আমরা এতো লেকচার দিলাম, আমরা কী করলাম? আমাদের কি কোনো দায় নেই? আমরা আর্টিস্টিক সিনেমা বানাইতে পারলাম না। নাক সিটকে এফ ডি সি থেকেও দূরে থাকলাম। সেখানে মেধার ঘাটতি হইলো। ওরাও সিনেমা বানাতে পারলো না, এরাও পারলো না। আল্টিমেটলি ইন্ডাস্ট্রি এখন ধ্বংসের পথে।

জাহাঙ্গীর : দেশে ডিজিটাল সিনেমা নির্মাণ ও প্রদর্শনীর কী অবস্থা একটু বলতো রাজীব?

রাজীব : শেষ দিকে ৩৫ মিলিমিটারের প্রজেকশনের যে অবস্থা ছিলো, তার চেয়ে ডিজিটাল অনেক ভালো। তবে এখানে ডিজিটাল প্রজেকশন যেটা হচ্ছে, হয়তো সেটা আন্তর্জাতিক মানের নাআমরা ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ডেও যেতে পারিনি। তার পরও মন্দ না। এর মাধ্যমেও সিনেমার ব্যবসা বাড়ানো যাবে। স্টার সিনেপ্লেক্স তিনটা সিনেমাহল দিয়ে যাত্রা শুরু করছিলো। এখন ছয়টা হয়েছে। সেখানে ইংরেজি সিনেমা বেশি চলে। ভালো বাংলা সিনেমা না পেলে তারা কী করবে? আমি পারসোনালি কোনো কিছু আটকে রাখার পক্ষে না। ম্যারাডোনা, মেসির খেলা দেখার জন্য এখানে লক্ষ লক্ষ মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। আমাদের এখানে তো তাদের মতো খেলোয়াড় নাই। এটা তো দর্শকের দোষ না। আমরা কেনো মেসি তৈরি করতে পারলাম না! আজকে হিন্দি সিনেমা দর্শক দেখবেই। আমি ভালো সিনেমা বানাতে পারছি না, অথচ বলছি ওগুলো অপসংস্কৃতিএগুলো চরম হিপোক্রেসি।

জাহাঙ্গীর : ভারতে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি রাষ্ট্রের কাছ থেকে অনেক সহায়তা পায়। তাদের বাজেট অনেক। আমাদের এখানে তো পরিস্থিতি ভিন্ন, তাই না?

রাজীব : দেখুন, রাষ্ট্রের ভূমিকা তো আছেই। এখন বলতে পারেন এখানকার সিনেমার বাজেট কতো? হলিউডের সিনেমার বাজেট কতো? তবে এখানে এমনও রেকর্ড আছে, যেমন মনপুরার কথাই ধরুন; একটা লো বাজেটের সিনেমা; অথচ সিনেমাহলে মাসের পর মাস চলেছে ইংরেজি সিনেমার সঙ্গে টেক্কা দিয়ে। দর্শক তার মাতৃভাষাতেও ভালো সিনেমা দেখতে চায়।

আসাদ : সিনেমার শিল্পগুণ, ভালো কিংবা খারাপ চিন্তা করার বাইরেও কিন্তু আরেক ধরনের দর্শক রয়েছে। কেউ হয়তো সিনেপ্লেক্সে গেলো— সিনেমা দেখবে, যেকোনো সিনেমা। আগে মফস্বলেও অনেকে নিয়মিত সিনেমা দেখতো। সিনেমা দেখার কালচার ছিলো। এখন সিনেমাহল নাই, ওই কালচারও নাই। আমার মনে হয়, এটাও একটা সমস্যা।

রাজীব : তবে আমরা আশাবাদী। তরুণ নির্মাতাদের ওপর আশা রাখা ছাড়া কোনো উপায়ও নাই। ইদানীং অ্যামেচার অনেক লোকজন নতুন ল্যাঙ্গুয়েজে সিনেমা বানানোর চেষ্টা করছেশর্ট ফিল্মও দেখা যাচ্ছে। আশা করা যায়, আগামীতে অনেক কিছু হবে। তবে বিজ্ঞাপনের মায়াবী ইশারা এবং টেলিভিশনের প্রভাব থেকে মুক্ত হয়ে চলচ্চিত্রের জন্য জীবন উৎসর্গ করতে হবে। (হাততালি)

আসাদ : আপনি আশাবাদী?

পারভেজ : অবশ্যই; অবশ্যই আমি আশাবাদী। নতুন চলচ্চিত্রের প্র্যাকটিস শুরু হয়েছে। কিছুটা সময় লাগবে। বাংলাদেশে সিনেমা হবে, ভালো সিনেমা হবে।

জাহাঙ্গীর : আমরা যদি ১০ বছর পর এ রকম আড্ডায় বসি, তখনো কি একই কথা শুনতে হবে?

রাজীব : (হাসি) জাহাঙ্গীর ভাই আসলে ঠিকই বলেছেন। এই কথাগুলো আমরা দশকের পর দশক বলে আসছি। তবে এখন প্রযুক্তিগত অনেক পরিবর্তন হয়েছে। আশা করা যায়, সিনেমার ক্ষেত্রেও সেই পরিবর্তন আসবে। তামিল বা তেলেগু সিনেমার দিকে তাকান, সেখানকার জনসংখ্যা আমাদের চেয়ে খুব বেশি না। পুরো সাউথে ছয় হাজার সিনেমাহল, যেখানে গোটা ভারতে রয়েছে ১২ হাজার। আমাদের এখানেও কিন্তু বিশাল বাজার। বাজার বড়ো না হলে প্যারালাল বা ইন্ডিপেন্ডেন্ট সিনেমার বিকাশ ঘটানো কঠিন।

পারভেজ : তবে মাল্টিপ্লেক্স কালচার গড়ে উঠলে ভালো সিনেমা হবে।

রাজীব : একটা সিনেমাহল কিন্তু ইতিহাসের অংশ। নরসিংদীতে আমরা যেসব সিনেমাহলে সিনেমা দেখতামমিতালী, সুরভী, ‘সঙ্গীতা’। মিতালী’ ও ‘সঙ্গীতা বন্ধ হয়ে গেছে। তবে কেউ ইচ্ছা করে সিনেমাহল বন্ধ করে না। মিতালী’র মালিকের সঙ্গে আলাপ করেছি, বললোসবাই আমাকে মিতালীর মালিক হিসেবেই চিনতো। আমি কি ইচ্ছা করে হল বন্ধ করেছি? মাসের পর মাস লোকসান দিতে হয়েছে।” অনেকেই সিনেমাহল বানায় একটা আশা নিয়ে, শুধু ব্যবসার জন্য নয়। এটা এমন ব্যবসা নয় যে, কেউ বিলিয়নিয়ার হয়ে যাবে। সিনেমার প্রতি একটা টান, ভালোবাসা থেকে অনেকে সিনেমাহল করেছিলো। এখন সিনেমাহল বন্ধ হওয়ায়, তাদের দোষ দিলে তো হবে না। এ দায় নির্মাতাদের ওপরেও পড়ে। এ দায় আমার ওপরও পড়েএতো টাকা দিয়ে সিনেমা বানালাম কেউ দেখলো না। তাহলে তুমি এতো টাকা ব্যয় করলে কেনো?

জাহাঙ্গীর : ম্যাজিক লণ্ঠন-এর গত সংখ্যায় (নবম সংখ্যা) একটা লেখা ছিলো, সেখানে এক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে বলিউডে বাণিজ্যিকভাবে সফল সিনেমার সংখ্যা খুব বেশি নয়।

রাজীব : শোনেন, সারা পৃথিবীতেই ইন্ডাস্ট্রির ১০১২ পার্সেন্ট সিনেমা হিট হয়। একজন প্রোডিউসার কীভাবে টিকে থাকে? চারপাঁচটা সিনেমা ফ্লপ; একটা সিনেমা হিট; তাতেই তার আগের সব লোকসান উঠে আসে। আরো অনেক ইনকাম হয়। এ রকম একটা চান্সে থাকে প্রোডিউসাররা।

জাহাঙ্গীর : মিঠু আরো কিছু বলো। তোমার কথা দিয়েই আজকের আড্ডা শেষ হোক।

মিঠু : আজকে তো শুরু থেকেই যেভাবে বৃষ্টি, তার পরও অনেক কথা হলো। বৃষ্টি না হলে আড্ডাটা আরো ভালোই জমতো। তার পরও সামনে আবার আড্ডা হবে। ম্যাজিক লণ্ঠন-এর পক্ষ থেকে সবাইকে ধন্যবাদ।

(শেষ)

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন