জাহাঙ্গীর আলম
প্রকাশিত ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ১২:০০ মিনিট
অন্যকে জানাতে পারেন:
‘চলচ্চিত্রযাত্রা’
জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে তারেক মাসুদ কেমন চলচ্চিত্র বানাতেন
জাহাঙ্গীর আলম
1735263359.jpg)
বিদ্রোহ, গণঅভ্যুত্থান, জনযুদ্ধ, বিপ্লব—কতোটা প্রভাব ফেলে সমাজ, রাষ্ট্র ও ব্যক্তিজীবনে? এর সঙ্গে জনগণ কতোটা সম্পৃক্ত? জনজীবনে এর প্রভাব কী? কে ছিলো ‘মাস্টারমাইন্ড’? রাজনীতির ময়দানে এসবের আলোচনা সবসময় চলতেই থাকে। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে আসে নতুন নতুন ব্যাখ্যা। জুলাই অভ্যুত্থানও নিশ্চয় এর ব্যতিক্রম হবে না।
জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেড় দশক ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়েছে; অবসান ঘটেছে ফ্যাসিস্ট শাসনের। একইসঙ্গে জনকল্যাণমূলক জবাবদিহি রাষ্ট্র গঠনের আকাঙ্ক্ষা প্রবল হয়েছে। তবে আশঙ্কাও আছে। অভ্যুত্থান পরবর্তী বিভিন্ন ঘটনায় প্রমাণ হয়েছে সমাজে ফ্যাসিস্ট প্রবণতা রয়ে গেছে। এখন সময়ই বলে দেবে বাংলাদেশ কোন পথে যাবে, নাকি একই বৃত্তে ঘুরপাক খাবে?
একাত্তরে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে। স্বাধীনতা সংগ্রাম পরিণত হয়েছিলো জনযুদ্ধে। বিদ্রোহ, গণঅভ্যুত্থান, জনযুদ্ধ, বিপ্লবের মতো ঘটনা কতোটা ব্যাপক ও বিস্তৃত তা মানুষের অংশগ্রহণ ও হতাহতের সংখ্যা দিয়ে হয়তো বোঝা যায়। তবে আরেকটি সূচক হতে পারে শিল্প-সাহিত্যে এর প্রভাব কেমন পড়েছে। মুক্তিযুদ্ধকে উপজীব্য করে বাংলাদেশে বিপুল সংখ্যক কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটক, চলচ্চিত্র প্রভৃতি শিল্পকর্ম সৃষ্টি হয়েছে; ভবিষ্যতে আরো হবে। তবে জুলাই অভ্যুত্থানের এই প্রভাব দেখতে হলে সবাইকে অপেক্ষা করতে হবে। এই অভ্যুত্থানে ব্যাপক মানুষের অংশগ্রহণ এবং সেই মানুষকে সামনে রেখে যদি শিল্প সৃষ্টি হয়, তবে তাতে জুলাই অভ্যুত্থান গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে থাকবে।
দুই.
চলচ্চিত্রে জুলাই অভ্যুত্থান কীভাবে উঠে আসবে? এই প্রশ্নের সঙ্গে সঙ্গে মনে পড়লো প্রয়াত চলচ্চিত্রনির্মাতা তারেক মাসুদের কথা। মুক্তিযুদ্ধের আওয়ামী বয়ান, ইসলামপন্থা ও সেক্যুলারতন্ত্রের বাইনারি প্রভৃতি নস্যাৎ করে জুলাই অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে। অধ্যাপক আ-আল মামুনের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, তারেক মাসুদকে বার বার ইসলামপন্থা বা পলিটিকাল ইসলাম এবং সেক্যুলারিজম বা সেক্যুলারতন্ত্রের খুপরিতে ঢোকানোর প্রচেষ্টা দেখা যায়। তার মতে, তারেক মাসুদের জীবন সাধনা উত্তর-কাঠামোবাদ, উত্তর-ঔপনিবেশিকতা এবং বিউপনিবেশায়নের তাত্ত্বিক মুহূর্তগুলোকে ছুঁয়ে যায় বার বার, আর তখন তার কাজগুলো পাঠ করতে হলে আমাদের স্বতন্ত্র ও নতুন ধরনের পদ্ধতি ও অবলোকনের প্রয়োজন হয়ে পড়ে।১
এই পরিস্থিতিতে মনে প্রশ্ন তৈরি হয়, তারেক মাসুদ এখন বেঁচে থাকলে জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে ঠিক কেমন চলচ্চিত্র বানাতেন? তার কাছ থেকে এই প্রশ্নের উত্তর আর পাওয়া যাবে না। তবে তার চলচ্চিত্র এবং চলচ্চিত্রবিষয়ক লেখালেখি থেকে হয়তো কিছুটা ইঙ্গিত পাওয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে সহায়তা করতে পারে তার ‘চলচ্চিত্রযাত্রা’ বইটি। ২০২১ খ্রিস্টাব্দে তারেক মাসুদের ১০ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বইটি পুনঃপ্রকাশ করে ঢাকার প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ‘ কথাপ্রকাশ’। ‘প্রথমা প্রকাশন’ থেকে তারেক মাসুদের চলচ্চিত্র ভাবনা ও নিজস্ব লেখনীর এই সংকলনটি প্রথম প্রকাশ হয়েছিলো ২০১২ খ্রিস্টাব্দে।
‘চলচ্চিত্রযাত্রা’র সংকলন ও সম্পাদনা করেছেন ক্যাথরিন মাসুদ, নাহিদ মাসুদ, প্রসূন রহমান ও বেলায়াত হোসেন মামুন। ভূমিকা লিখেছেন তারেক মাসুদের স্ত্রী চলচ্চিত্রনির্মাতা ক্যাথরিন মাসুদ। ভূমিকায় ক্যাথরিন লিখেছেন, এই বইয়ে সবচাইতে গুরুত্বের সঙ্গে যা করা হয়েছে, তা হলো সংকলিত ৩৮টি প্রবন্ধের শ্রেণিবদ্ধকরণ। সবগুলো প্রবন্ধকে বিষয়ভিত্তিক মোট আটটি অধ্যায়ে সাজানো হয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে প্রাসঙ্গিক আলোকচিত্র। প্রবন্ধ সংকলন ও সম্পাদনার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ক্যাথরিন বলেন, ‘... তারেকের বহু লেখায় কিছু কিছু বিষয় ও প্রসঙ্গের পুনরাবৃত্তি রয়েছে। যেহেতু তারেক বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সংস্কৃতির সাধনায় জীবনভর চিন্তাশীল ভূমিকা রেখেছেন তাই তাঁর রচনাগুলোতে বারংবার কিছু নির্দিষ্ট বিষয় ও প্রসঙ্গের পুনরাবৃত্তি অবধারিত ছিল’। এ কারণে সম্পাদনার সময় তারা পুনরাবৃত্তি হওয়া লেখাগুলো যথাসম্ভব এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন বলে জানিয়েছেন।
তিন.
তারেক মাসুদ তার মুক্তির কথা সম্পর্কে ‘মুক্তির গান, মুক্তির কথা ও তৃতীয় প্রচেষ্টা’ প্রবন্ধে বলেছেন এভাবে—
... ছবিটি মুক্তি পাওয়ায় এক ধরনের বিতর্ক-বাহাস মোচড় দিয়ে ওঠে। ফলে এ দেশের বৈচিত্র্যময়তা এবং বহুত্ববাদিতাকে জড়িয়ে নিয়ে নতুন করে ’৭১-কে ব্যাখ্যা-মূল্যায়ন করার চেষ্টা শুরু হয়, যা আরও ব্যাপ্ত এবং জটিলতর। কিন্তু স্ববিরোধিতার ধারা অব্যাহত থেকেই যায়। এর মৌলিক সমস্যাটি ছিল, বাংলাদেশের মুসলমান এবং বাঙালি—এই দ্বৈত পরিচিতির সামঞ্জস্য বিধান করা। এটিই আমার পরবর্তী ছবির প্রধান বিষয় হয়ে ওঠে।
তার সেই পরবর্তী সিনেমাই হলো মাটির ময়না।
তারেক মাসুদের শৈশবের অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে মাটির ময়না নির্মিত; এটি মুক্তি পায় ২০১২ খ্রিস্টাব্দে। চলচ্চিত্রের সময়কাল ১৯৬০-এর শেষ ভাগ। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান তখন অগ্নিগর্ভ উত্তাল। দেশের মানুষ দুই ভাগে বিভক্ত। ইসলাম রক্ষার নামে পাকিস্তানপন্থিরা, অন্যদিকে শোষণ-শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী বাঙালি জাতীয়তাবাদী শক্তি। শেষ পর্যন্ত বাঙালি জাতীয়তাবাদের ওপর ভিত্তি করে স্বাধীনতা আসে। অভ্যুদয় হয় স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের। এই চলচ্চিত্রে তারেক মাসুদ ধর্ম ও আত্মপরিচয়ের গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলো তুলে ধরেন।
১৯৯০ খ্রিস্টাব্দে আমেরিকান চিত্রগ্রাহক লিয়ার লেভিন-এর ভিডিও ফুটেজ পেয়ে মুক্তির গান-এর নির্মাণ শুরু করেন তারেক মাসুদ। ওই ফুটেজের ১৫ ঘণ্টাই ছিলো ’৭১-এর শরণার্থী শিবিরের। এছাড়া ভারত, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন স্থান থেকে ফুটেজ সংগ্রহ ও কিনে এই চলচ্চিত্রে ব্যবহার করা হয়। প্রযুক্তির উন্নয়নে বতর্মানে ভিডিও ফুটেজ সহজলভ্য। পেশাদার চিত্রগ্রাহক ছাড়াও এখন মানুষের হাতে হাতে মুঠোফোনের ক্যামেরা। একাত্তরের তুলনায় জুলাই অভ্যুত্থানে ভিডিও ফুটেজের সুনামি হয়েছে বললেও বাড়িয়ে বলা হবে না। ফলে এই অভ্যুত্থান নিয়ে কেমন চলচ্চিত্র নির্মাণ হবে? প্রামাণ্যচিত্র নাকি কাহিনিচিত্র? তবে তারেক মাসুদ প্রথাগত প্রামাণ্যচিত্র ও কাহিনিচিত্রের ধারণা ভেঙে দিয়েছেন। তার মতে, এই দুইয়ের সীমান্তরেখা খুবই ঠুনকো। কারণ দুটোই ইন্টারপ্রিটেশন, দুটোই রিপ্রেজেন্টেশনাল—অন্য কথায় দুটোই ফিকশন।
আপাতভাবে আওয়ামী ফ্যাসিজমের ভাবাদর্শ ছিলো বাঙালি জাতীয়তাবাদ। আওয়ামী বয়ানে ৭১-এ ধর্মীয় জাতীয়তাবাদকে (ইসলামপন্থা) পরাজিত করে সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদ (বাঙ্গালিপনা) জয়ী হয়েছিলো। জুলাই অভ্যুত্থানের পর ইসলামপন্থিরা দাবি করছে, ধর্মীয় জাতীয়তাবাদ জয়ী হয়েছে। আবার সেই কূটতর্ক—আগে বাঙালি, পরে মুসলমান নাকি আগে মুসলমান পরে বাঙালি। অর্থাৎ তারেক মাসুদ বাংলাদেশের মুসলমান এবং বাঙালি, এই দ্বৈত পরিচিতির সামঞ্জস্য বিধানের বিষয়বস্তু নিয়ে মাটির ময়না নির্মাণ করেছিলেন; সেই একই বিষয় বর্তমানেও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।
মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনা বা তাৎপর্য খুঁজতে আমাদের গেঁয়ো পথেই হাঁটতে হবে—তারেক মাসুদ এই কথা বলেছিলেন ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে। একইসঙ্গে তিনি আঞ্চলিক ইতিহাসের ওপরও গুরুত্বারোপ করেছেন। তার মতে, আঞ্চলিক ইতিহাসের সমন্বয়েই জাতীয় ইতিহাস নির্মিত হওয়া দরকার। কিন্তু তা ঘটছে একেবারে উল্টোভাবে। জাতীয় ইতিহাসের পূর্বনির্ধারিত ধারণার নিরিখে রচিত হয়েছে আঞ্চলিক ইতিহাস। বিশ্লেষণ করতে গিয়ে জাতীয় ইতিহাসকে আঞ্চলিক ইতিহাসের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। গ্রামে গ্রামে গিয়ে মুক্তির গান প্রদর্শন করেন তারেক মাসুদ। কিন্তু এই চলচ্চিত্র দেখে গ্রামের মানুষ প্রশ্ন তুলেছেন। সেই প্রশ্ন ও প্রতিক্রিয়াকে কেন্দ্র করে নির্মাণ হয়েছে মুক্তির কথা।
জুলাই অভ্যুত্থান নিয়েও একইভাবে চলচ্চিত্র নির্মাণ হতে পারে। শুধু ঢাকায় নয়, দেশের প্রতিটি জেলায় আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছিলো। সেই আঞ্চলিক ইতিহাস তুলে আনতে হবে। আঞ্চলিক ইতিহাসের সমন্বয়ে নির্মাণ হবে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের জাতীয় ইতিহাস।
চার.
‘চলচ্চিত্রযাত্রা’য় একটি প্রবন্ধের নাম ‘আমরা কি গণহত্যার কথা ভুলে গেছি’। এখানে তারেক মাসুদ বলছেন, মুক্তিযুদ্ধের যে ব্যাপকতা—এটা শুধুই যুদ্ধ নয়, এর একটা মানবিক দিক রয়েছে, আশা-আকাঙ্ক্ষার দিক রয়েছে, গণহত্যার বীভৎসতা রয়েছে। মূলধারার ইতিহাসে কেবল মধ্যবিত্তের বীরত্ব আছে। তবে মুক্তির কথায় কৃষকদের বর্ণনায় সেই বীরত্বের কথা নেই। তারা বলছে, পাকিস্তানিরা সবাইকে মেরে ফেলছে, তাই তারা রুখে দাঁড়িয়েছে। এই প্রতিরোধ গণহত্যার বিরুদ্ধে। মধ্যবিত্তের বর্ণনায় গণহত্যাকে বড়ো করে দেখা হয় না।
জুলাই অভ্যুত্থানে ব্যাপক সহিংসতা হয়েছে। হতাহত প্রত্যেক মানুষের রয়েছে সংগ্রামী হৃদয়বিদারক গল্প। কোন স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষা নিয়ে তারা এই অভ্যুত্থানে যোগ দিয়েছেন? নতুন বাংলাদেশে সেই স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষা কি বাস্তবে রূপ নেবে? এসব কি নতুন চলচ্চিত্রে উঠে আসবে?
পাঁচ.
তারেক মাসুদের মুক্তিযুদ্ধ ঘিরে চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য—মুক্তির গান, মুক্তির কথা, মাটির ময়না ও নরসুন্দর। তিনি মনে করতেন, যেকোনো যুদ্ধের যেমন ভিন্ন ভিন্ন ন্যারেটিভ বা অ্যাখ্যান-উপাখ্যান থাকে তেমনই যুক্তিযুদ্ধেরও বিভিন্ন বয়ান থাকবে। এই বয়ান সৃষ্টিতে চলচ্চিত্র বড়ো ভূমিকা রাখে। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে বাস্তবে কী ঘটেছে, তার চেয়ে এ সংক্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গি ও দৃষ্টিকোণ অনেক গুরুত্ববহন করে। এই দৃষ্টিকোণ তৈরি হয় আসলে এই অ্যাখ্যান দিয়ে। মুক্তিযুদ্ধ মানেই যে ফর্মুলা—সেটাকে এভাবেই দেখতে হবে¾অন্যভাবে বলা বা দেখার কোনো অধিকার কোনো শিল্পীর নেই, এটা ঠিক নয়। একই কথা প্রযোজ্য জুলাই অভ্যুত্থানের ক্ষেত্রেও। এই অভ্যুত্থানে বিভিন্ন দল-মতের মানুষ অংশ নিয়েছে। তাদের ভিন্ন ভিন্ন অ্যাখ্যান থাকবে। সেগুলো নিয়ে চলচ্চিত্রও নির্মাণ হবে। একইসঙ্গে তারেক মাসুদ সতর্ক করে দিয়েছেন নির্মাতার নিজের উদ্দেশ্য কী? তার দৃষ্টিভঙ্গির গ্রহণযোগ্যতার প্রশ্নটি থেকেই যায়। সিনেমার মধ্য দিয়েও এটা অনেক সময় বোঝা যায়, আবার বোঝা যায় নির্মাতার ব্যাকগ্রাউন্ড থেকেও।
স্বাধীনতার দু-এক বছরের মধ্যেই মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশে চলচ্চিত্রের নিছক পুঁজির উপাদান হিসেবেই ব্যবহৃত হতে শুরু করে। দুঃখজনক হলেও সত্য, পরবর্তী সময়ে মুক্তিযুদ্ধ কেবল আর্থিক পুঁজিই না, বিভিন্ন আমলে রাজনৈতিক পুঁজি হিসেবেও কখনো কখনো ব্যবহৃত হয়েছে। মনে রাখতে হবে জুলাই অভ্যুত্থান নিয়েও একই ঘটনা ঘটতে পারে।
আশার কথা, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে যোগ দিয়েছেন চলচ্চিত্রনির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। তার অগ্রাধিকার তালিকায় রয়েছে চলচ্চিত্র। আট বিভাগের কর্মশালা শেষে প্রতি বিভাগ থেকে ১০ জন করে তরুণ নির্মাতাকে বাছাই করা হবে। তারা দেশের বর্তমান সময়ের একজন নির্মাতার তত্ত্বাবধানে ৪০ মিনিট দৈর্ঘ্যরে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণের সঙ্গে জড়িত থাকবে। এসব চলচ্চিত্র নিয়ে আয়োজন করা হবে একটি উৎসবের!
ছয়.
তানভীর মোকাম্মেল নির্মিত তাজউদ্দীন আহমদ : নিঃসঙ্গ সারথি নিয়ে আলোচনায় তারেক মাসুদ বলেছেন, কাউকে বড়ো করতে হলে আরো বড়ো কাউকে ছোটো করার দরকার হয় না। তিনি আরো বলেন, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের নিয়ে নির্মিত সিনেমায় ব্যক্তিপূজা অনিবার্য হয়ে পড়ে। জুলাই অভ্যুত্থানের পর রাজনীতির মাঠে বাংলাদেশের জাতীয় নেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, শেখ মুজিবুর রহমান, জিয়াউর রহমান প্রমুখদের নিয়ে আলাপ-আলোচনা হবে; নির্মাণ হবে চলচ্চিত্র। এমন কী অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী ছাত্র নেতারাও আলোচনায় আসবে। তাদের নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ হতে পারে। তখন কিন্তু তারেক মাসুদের এই কথা স্মরণ রাখা অত্যন্ত জরুরি।
সাত.
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রশিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী ছিলেন তারেক মাসুদ। অতীত ও বর্তমান মিলিয়ে তিনি ইতিবাচক ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখতেন। শুধু স্বপ্ন দেখা নয়, তিনি সুনির্দিষ্ট কর্মপন্থাও নির্ধারণ করতেন। ‘বাংলাদেশের চলচ্চিত্রশিল্পের ভবিষ্যৎ’ শিরোনামের অগ্রন্থিত এক প্রবন্ধে তিনি বলেছেন, জাতীয় চলচ্চিত্র সংস্কৃতির একটি রূপরেখা গড়ে তুলতে হবে। এই বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে পুরো চলচ্চিত্রশিল্প-সংস্কৃতিকে ঢেলে সাজানোর এখনই মোক্ষম সময়। জুলাই অভ্যুত্থানের পর যখন সব খাতে সংস্কার হচ্ছে, তখন আরো একবার বলা যায়, চলচ্চিত্রের জন্যও এখনই মোক্ষম সময়। আর এই সংস্কারে তারেকের ‘চলচ্চিত্রযাত্রা’ গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দিতে পারে।
বইয়ের নাম : চলচ্চিত্রযাত্রা
লেখক : তারেক মাসুদ
প্রকাশক : কথাপ্রকাশ, ঢাকা
প্রকাশকাল : কথাপ্রকাশ সংস্করণ, আগস্ট ২০২১
প্রথমা প্রকাশন, ২০১২
প্রচ্ছদ : সব্যসাচী হাজরা
পৃষ্ঠাসংখ্যা : ২৬৪
মূল্য : ৪০০ টাকা
লেখক : জাহাঙ্গীর আলম, প্রথম আলো পত্রিকায় জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক হিসেবে কর্মরত।
alamrumcj@gmail.com
তথ্যসূত্র
১. মামুন, আ-আল (২০২৩ : ২২২); সিনেমার সাংস্কৃতিক রাজনীতি : আধুনিকতা জাতীয়তা আত্মসত্তা; কথাপ্রকাশ, ঢাকা।
এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন