ম্যাজিক লণ্ঠন প্রতিবেদক
প্রকাশিত ২৫ জানুয়ারী ২০২৩ ১২:০০ মিনিট
অন্যকে জানাতে পারেন:
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৮ বছর পর ‘সুনাগরিকের সন্ধানে’ মঞ্চস্থ
ম্যাজিক লণ্ঠন প্রতিবেদক

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৮ বছর পর মঞ্চায়িত হয়েছে ‘সুনাগরিকের সন্ধানে’ নাটক। গত সোমবার (২৩ জানুয়ারি) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার মুক্তমঞ্চে নাটকটি পরিবেশিত হয়। অনুশীলন নাট্যদলের প্রযোজনায় ৪০ মিনিটের এই নাটকটি লিখেছেন ও নির্দেশনা দিয়েছেন অধ্যাপক মলয় ভৌমিক।
২০০৫ সালে লেখা ও মঞ্চায়িত করা এ নাটকটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুশীলন নাট্যদলের ৬৪তম প্রযোজনা।
পুরো নাটকজুড়ে শিল্পীদের অভিনয়শৈলী ও ব্যাঙ্গরসাত্মক সংলাপ নগরকর্তার বুদ্ধিহীন কর্মকাণ্ড, তাঁর পণ্ডিতের জ্ঞানের অসারতায় দর্শকেরা যেমন হেসে গড়িয়ে পড়েছেন, তেমনি চলমান সমাজব্যবস্থার ত্রুটিগুলো ফুটে উঠেছে। এসব দৃশ্য দেখে দর্শক একের পর এক করতালি দিয়েছেন।
নাটকে দেখা যায়, নগরকর্ত্রীর জন্মদিন উপলক্ষে কী করা যায়, তা ঠিক করতেই সভাসদেরা গলদঘর্ম। শেষ পর্যন্ত গৃহকর্তা ঠিক করলেন, ওই দিন একটি গণশৌচাগার উদ্বোধন করবেন। এটি একটি জনহিতকর কাজ। এতেই যারপরনাই চটে যান গৃহকর্তী।
গৃহকর্তার আপত্তি, জন্মদিনে কি কারও শৌচাগারের প্রয়োজন পড়তে পারে না! শেষ পর্যন্ত একজন সুনাগরিককে সংবর্ধনা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এই সুনাগরিক খুঁজতে পণ্ডিতের কাছে পরীক্ষা দিতে এলেন নাগরিকেরা। সেখানে একজন রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর সংজ্ঞা অনুযায়ী সুনাগরিকের গুণাবলি-বুদ্ধি, আত্মসংযম ও বিবেক যাচাই করার জন্য বোর্ড বসানো হয়।
সেখানে লেখাপড়া না করাই একজন সুনাগরিকের গুণাবলি হিসেবে ধরা হলো। এমন সব হাস্যকর প্রশ্নোত্তর পর্বে কোনো নাগরিকই উত্তীর্ণ হতে পারলেন না। শেষ পর্যন্ত পাঁচ দিন ধরে না খেয়ে থাকা একজনকে আত্মসংযমী বলে তুলে আনা হলো। এভাবেই নাটকের কাহিনির শেষ হয়।
নাটকে নগরকর্তার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন রাকিবুল আলম, নগরকর্ত্রীর ভূমিকায় তানজীমা মাহজাবিন, নগরমন্ত্রী লিঙ্কন বিশ্বাস, নগর পণ্ডিত আরিফুল ইসলাম, ঘোষক ফাতিমা তুজ জোহরা ও সুব্রত কুমার হালদার, নগররক্ষী হৃদয় ভৌমিক, নাগরিক অন্তর মহান্ত, হৃদয় তালুকদার ও মোশাররফ হোসেন এবং নতর্কীর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন সাদিয়া আফরিন।
নাটকটি মঞ্চায়নের আগে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য আধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম, অনুশীলন নাট্যদলের সভাপতি এসএম আবু বক্কর, নাটকটির লেখক ও নির্দেশক মলয় ভৌমিক।
উপাচার্য আধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, তিনি চান, বাঙালির দর্শন সহনশীলতা এবং সৃজনশীলতা সবার মাঝে পরিস্ফুটিত হোক। নাটকের মধ্যে দিয়ে আমাদের যত সমস্যা যত প্রতিকূলতা আছে সেগুলো পেরুতে পারা যাবে।
তিনি আরও বললেন, ধর্মান্ধতা, কূপমণ্ডূকতা ও আলোর বিরুদ্ধে সব প্রতিবন্ধকতার মোকাবিলা করবে নাটক ‘সুনাগরিকের সন্ধানে।’
অধ্যাপক মলয় কুমার ভৌমিক বলেন, নাটকটি ২০০৫ সালে লেখা। সেই লেখাটিকে পুনরায় তুলে আনা হয়েছে। নাটকটি একধরনের রাজনৈতিক বিদ্রুপাত্মক।
নাটকের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে তিনি বলেন, যুগে যুগে শাসক গোষ্ঠীরা সাধারণ মানুষকে ধোকা দিচ্ছে। তারা নিজেরা তেমন যোগ্যতা সম্পন্নও নয়। তাদের অযোগ্যতাও নাটকের মধ্য দিয়ে বেরিয়ে এসেছে। শাসকরা যদি অযোগ্য হয় তাহলে তাদের মাধ্যমে সাধারণ মানুষও নানাভাবে শোষিত, নির্যাতিত হয়। তাদের দ্বারা যোগ্য ব্যক্তিও বের করে নিয়ে আসা সম্ভব নয়। তবে এর প্রতিবাদ একসময় সাধারণ মানুষ করে এবং সাধারণ মানুষেরই জয় হয়। যা এই নাটকের শেষ অংশে দেখা যায়।
এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন